এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা ২৭ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আর্থিক অনিয়ম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থাটি।
শনিবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আয়োজিত এক সেমিনারে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
'বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিএফআইইউর ২০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারটি রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) কাছে আবারও তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউ এর অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার এসএনবি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে সুইস ব্যাংকগুলোর কাছে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দায় অর্থ্যাৎ গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের তথ্য প্রকাশ করে।
এতে দেখা যায়, ২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা টাকার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। ১৯৯৬ সালের পর থেকে যা সর্বোচ্চ।
আগের তিন বছর টানা কমলেও গত এক বছরে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রাখা অর্থে ব্যাপক উল্লম্ফন হয়েছে।
শনিবার সেমিনারে এসএনবির কাছে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থের বিষয়ে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়ে বিএফআইইউ অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, “পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে।
দেশে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে কাজ করা বিএফআইইউ আয়োজিত এ সেমিনারে জানানো হয়, এসএনবি অর্থপাচার বা দুর্নীতির সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুইস ব্যাংকগুলোতে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের বিষয়ে ২০১৪ সাল থেকে তথ্য প্রকাশ করে আসছে।
বিশ্বজুড়ে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তার নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না।
এদিকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।
বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয় বলে সেমিনারে জানানো হয়।
তবে মামলাগুলোর ধরণ ও কাদের বিরু বিস্তারিত এবং বিএফআইইউ এর মতামতের ভিত্তিতে কোন সংস্থা এসব অর্থ জব্দ করেছে তা সেমিনারে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সাত মামলার বিপরীতে ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জব্দ করা হয় আদালতের নির্দেশে।
আর গত পাঁচ বছরে ৬৩টি তদন্তাধীন মামলার বিপরীতে জব্দ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাজেয়াপ্ত ঘোষণার পর সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্ব সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।