গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রয়েছে: অর্থমন্ত্রী

মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি পুরোপুরি সচল রয়েছে বলে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2022, 02:39 PM
Updated : 9 June 2022, 02:39 PM

মহামারীর পর যুদ্ধের বাস্তবতায় দাঁড়িয়েও উন্নয়নের হারানো গতিতে ফেরার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনে গ্রামীণ অর্থনীতির কথা বলে তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, “ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য আমরা খাবারের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি নিম্ন-আয়ের ৭০ লাখ ৫৭ হাজার পরিবারের মাঝে সরকার মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেছে।

“সারাদেশে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত ৩৫ লাখ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২৭ লাখ উপকারভোগী পরিবারের প্রত্যেককে ২,৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করেছি।”

কৃষি পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখায় গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজের বাস্তবায়নের ফলে খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রয়েছে। কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ হতে উপকৃত হয়েছে দেশের ১ কোটি ৬৫ লক্ষ কৃষক পরিবার।

“নিম্ন-আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের সুবিধা ভোগ করেছে এ পর্যন্ত ৫.৩৪ লাখ নিম্ন-আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গ্রামীণ অর্থনীতিকে কর্মসৃজনের মাধ্যমে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের ঋণদান প্যাকেজসমূহের উপকারভোগী হলো লাখ লাখ গ্রামীণ জনগণ এবং এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি পুরোপুরি সচল রয়েছে।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক ধাক্কা বাংলাদেশ ভালোভাবে কাটিয়ে উঠেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠেছে। সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে শিল্প উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও তা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। মাসিক শিল্প উৎপাদন সূচক অতিদ্রুত কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আসে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ-এর সময়ে শিল্প উৎপাদন পুনরায় কিছুটা স্তিমিত হলেও অল্প সময়ে শিল্প উৎপাদন সার্বিকভাবে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

“চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪.০৯ শতাংশ বেশি। রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছরশেষে পণ্য রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।”

সফলভাবে টিকা প্রদানের ফলে অর্থনৈতিক চাকা দ্রুত সচল করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন,  “অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জনের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হলো সফলভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা। মাত্র এক বছরের মধ্যে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের প্রায় সকল নাগরিককে সফলভাবে দুই ডোজ টিকা প্রদান করতে পেরেছি। বর্তমানে আমরা বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।“

তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখার কথা তুলে ধরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে বেতন-ভাতা বাবদ সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সরবরাহ করেছে তা হতে সরাসরি উপকৃত হয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পের ৩৮ লাখ শ্রমিক-কর্মচারি, যার ৫৩ শতাংশ নারী।

“ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে আমাদের দেওয়া ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা এবং একইভাবে কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হতে এ পর্যন্ত সুবিধা গ্রহণ করেছে ৪,৫২৯টি বৃহৎ ও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬১টি কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান।”