শুক্রবার বিকালে মালদ্বীপ সফররত প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে এ পরামর্শ দেন।
দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে পরে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়ার বদলে তিনি শুরুতেই সতর্ক থাকার তাগিদ দেন। এ জন্য সরকারের নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে ডিজিটাল সেন্টারে নিবন্ধনের মাধ্যমে বিদেশ যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি, এ তালিকা ধরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়া এবং বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসী ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে আসে।
মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপ থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর সমস্যার সমাধানে প্রবাসী ব্যাংককে নিদের্শনা দেওয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনা দেশটির অভিবাসীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণাও দেন।
একই সঙ্গে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের দেশে সহজে মালপত্র পাঠাতে দুটি কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
প্রবাসীদের কল্যাণকে আওয়ামী লীগ সবসময় নিজেদের দায়িত্ব মনে করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তবে, আমি এইটুকু বলবো আপনারা একটা কাজ করবেন, সেটা হলো- যারা বিদেশে আসতে চায় তারা যেন ওই দালাল ধরে না আসেন। তারা যেন বৈধভাবে আসার চেষ্টা করেন।
বাড়ি ঘর বিক্রি করে দালালের হাতে টাকা দেওয়ার দরকার নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, বরং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। এবং এ ঋণ ক্ষেত্র বিশেষে কোনো জামানত ছাড়াও দেওয়া হয়।
“কারণ সেই ঋণটা আপনারা ধীরে ধীরে সেই ব্যাংকেই শোধ করে দিতে পারবেন। সেই সহজ ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।“
বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে কেউ এসে একটা ভালো …সোনার হরিণ ধরার একটা সুযোগ দেখালো, আর সবাই সেই পথে দৌড়ালো তারপরই বিপদে পথে, অনেক সময় মৃত্যু হয় এই রকম বহু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
“এইভাবে সোনার হরিণ ধরার পেছনে ছোটার কোনো দরকার নেই।“
তিনি নানা প্রতিবদ্ধকতা মোকাবেলা করে বিদেশে গিয়ে প্রবাসীদের নানা জটিলতায় পড়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা যাতে দেশে অর্থ পাঠাতে পারে আওয়ামী লীগ সরকার সেই ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপের অভিবাসীদের টাকা পাঠানোর সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই সমস্যাটা যাতে না থাকে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককেই আমি বলবো যে, এ ব্যাপারে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে মানি এক্সচেঞ্জের সুবিধাটা করে দিয়ে, হয়ত একজন এজেন্ট রেখে তার মাধ্যমে টাকাটা পাঠিয়ে দেবে।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটির কাছাকাছি মানুষ বিদেশে কাজ করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা মালদ্বীপে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রশিক্ষণে দেশটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
“আপনাদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। এখানে কী ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে সেটা দেখে যদি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তাহলে আরও ভালো কাজের একটা সুযোগ পাওয়া যাবে। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নেব।“
পাশাপাশি দ্বীপ দেশটিতে রপ্তানি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় আক্ষেপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যদি করোনা না থাকতো আর যদি বয়সটা কম থাকতো, তাহলে কোন কোন দ্বীপে কারা আছেন- ঘুরে ঘুরে দেখতে পারতাম। সেটাতো আর সম্ভব হচ্ছে না। আমি নিজেও তো বৃদ্ধ হচ্ছি, এটাও তো ভাবতে হবে।“
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতে এয়ারলাইন্স চলাচলের সুযোগ করে দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বেসরকারি খাতের বিমান ইতিমধ্যেই মালদ্বীপে আসা শুরু করেছে। এবং আমাদের যে সরকারি বিমান আছে তার থেকেও আমরা মালদ্বীপে সরাসরি একটা যাতায়াতের ব্যবস্থা করবো। এটা আমাদের একটা লক্ষ্য আছে।
মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কোভিড টিকা দিতে উদ্যোগ নেওয়ায় দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।