বাণিজ্যের আড়ালে ৬ বছরে ‘পাচার’ ৫০ বিলিয়ন ডলার

পণ্যের মূল্য ঘোষণায় ফাঁকি রেখে ছয় বছরের বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার ‘পাচারের’ হিসাব এসেছে এক প্রতিবেদনে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2021, 03:29 PM
Updated : 17 Dec 2021, 04:16 PM

ডলারের বিনিময় হার ৮৬ টাকা হিসাবে এর পরিমাণ দাঁড়ায় সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি, যেখানে এবছর বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৬ লাখ কোটি টাকার মত।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এক দশকে বিশ্বের উন্নয়নশীল ১৩৪ দেশ থেকে বাণিজ্যের আড়ালে এক দশমিক ছয় ট্রিলিয়ন বা একলাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে।

এভাবে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে চীন থেকে। এরপরই আছে পোল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া ও মালয়েশিয়া।

এই ১০ বছরে ১৩৪টি দেশের দেওয়া যেসব তথ্য জাতিসংঘের ডেটাবেইজে পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জিএফআই। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ডেটা পাওয়া যায়নি।

জিএফআই যে হিসাব দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, ২০০৯ সালের পর থেকে এভাবে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বেড়েছে।

এর মধ্যে ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের হিসাবে গরমিল ধরা পড়েছে, ২০০৯ সালের হিসাবে দেখা গেছে ৫২১ কোটি ২০ লাখ ডলারের ফাঁকি।  

২০১০ সালে ৬৮৪ কোটি ডলার, ২০১১ সালে ৮৭৩ কোটি ডলার, ২০১২ সালে ৭৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার ও ২০১৩ সালে ৯৩৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাচার হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

দুটি নির্দিষ্ট দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের তথ্য মিলিয়ে দেখে এই গরমিল বের করে জিএফআই।

ধরা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ কোটি ডলারের কলা রপ্তানির তথ্য জানিয়েছে একুয়েডর। কিন্তু সে দেশ থেকে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের কলা আমদানির তথ্য দিল যুক্তরাষ্ট্র।

এখানে দুই কোটি ৫০ ডলারের হিসাবের গরমিল পাওয়া গেল। এভাবে প্রতিবছর সব দেশের সব পণ্যের মূল্যের হিসাবে গরমিল বের করে তা যোগ করেছে জিএফআই।

আর কয়েক ধাপের ফিল্টার ব্যবহার করে গরমিলটুকু বাণিজ্যের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে ১৩৪টি দেশের ১০ বছরের (২০০৯-২০১৮) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে কীভাবে কোন দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়, সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৬টি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও তুলে আনা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আমদানি-রপ্তানিকারকেরা পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি দেখানোর মাধ্যমে অর্থপাচার করেন।

অর্থাৎ যে দামের পণ্য তিনি কিনছেন, তার চেয়ে বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) বিদেশে পাচার করছেন। একইভাবে রপ্তানি পণ্যের দাম কম  (আন্ডার ইনভয়েসিং) দেখিয়েও ফাঁকি দেওয়া হয়।

জিএফআই বলছে, বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার এভাবে বেরিয়ে যায়, যা মোট বাণিজ্যের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।

আর বিশ্বের উন্নত ৩৬টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই অংক ৩৫৬ দশমিক ৮০ লাখ ডলার, যা এসব দেশের সঙ্গে মোট বাণিজ্যের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশ ও ৩৬টি উন্নত অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্যে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের গরমিল দেখা গেছে।