বোরো সংগ্রহ: কৃষকের বাড়ল কেজিতে ১ টাকা, মিলারদের ৩ টাকা

কৃষকের জন্য কেজিতে এক টাকা এবং মিলারদের জন্য কেজিতে তিন টাকা দাম বাড়িয়ে এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2021, 06:47 AM
Updated : 26 April 2021, 08:25 AM

কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হবে ২৭ টাকা কেজি দরে। আর মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকায় সিদ্ধ চাল এবং ৩৯ টাকায় আতপ চাল কেনা হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন।

গতবছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।

কিন্তু মহামারীর মধ্যে মিল মালিকরা সরকারকে চাল সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত মজুদ ঠিক রাখতে সরকারকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বোরো মৌসুমে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার চিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদনও দিয়েছেন।”

আগামী বুধবার থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে চাল কেনা শুরু হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।

সরকারি সংগ্রহের ক্ষেত্রে চালের গুণগত মানের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “চালের কোয়ালিটি বজায় রেখেই ক্রয় করার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

ধানে এক টাকা এবং চালে তিন টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কৃষকদের প্রতি যথেষ্ট সদয় দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের একটি জিনিস মনে রাখতে হবে, ২৭ টাকা ধান হলে… ধান-চালের রেশিও… ৬০ কেজি ধানে ৩৯ কেজি চাল হয়। সেই হিসেবে ২৭ টাকা ধান হলে কিন্তু চালের দাম ৪২ টাকা কয়েক পয়সা পড়ে। এতে খুদ-গুঁড়া ইত্যাদি মাইনাস করে ৪০ টাকা এনেছি।

“আমি মনে করি কৃষকদের থেকে ধান কেনার মূল্য এর চেয়ে যদি আরও বাড়ানো হয়, তাহলে বাজারে চালের মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে।”

মন্ত্রী বলেন, “আগামী ২৮ তারিখ প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু করব। এর মধ্যেই কোন উপজেলায় কী পরিমাণ ক্রয় করা হবে, সেই বিভাজনগুলো আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেব। পাশাপাশি চালের বিভাজনও আমরা পাঠিয়ে দেব।”

এর মধ্যে চাল সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি সেরে ফেলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী ছয় দিনের মধ্যে মিলারদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে চাল কেনা শুরু করব। আশা করছি সঠিকভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারব, সেইভাবে আমরা মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনাও দিয়েছি। মাঠ পর্যায়ে এও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, কোনো কৃষক যেন তাদের ধান নিয়ে এসে ফেরত না যায়।”

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি গুদামে মাত্র ৪ দশমিক ৯৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে, যার মধ্যে চালের পরিমাণ ৩ দশমিক ০৫ লাখ টন।

মজুদের এই পরিমাণ গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গতবছর জুলাই মাসে অর্থবছরের শুরুতেও সরকারের গুদামে ১১ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল।

সরকার এবার ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “এবার ফসল ভালো হয়েছে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয়, কৃষকরা যদি ভালোভাবে ধান তুলতে পারে, তাহলে আমি মনে করি কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”

এবার ধান ও চালের উৎপাদন খরচ কেমন পড়ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, উৎপাদন খরচ একেক জায়গা থেকে একের রকম এসেছে।

“তবে কৃষক হিসেবে আমি এটুকু বলতে চাই, সরকার সেচ, সার, হারভেস্টিংয়ে যে প্রণোদনা দেয়, মেশিন দিয়ে ধান কাটার সুযোগ করে দেয়, তাতে আমি মনে করি এই দাম তাদের উৎপাদন খরচ থেকে লাভের পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে।”

আরেক প্রশ্নের উত্তরে সাধন চন্দ্র মজুমদার দাবি করেন, কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ থাকার কোনো সুযোগ নেই।

“সরকার আগেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছে। তারপর তো অ্যাপের মাধ্যমে, লটারির মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা শুরু হয়। মধ্যস্বত্বভোগী থাকার কোনো সুযোগ নেই। মধ্যস্বত্বভোগী আমাদেরকে ডাইরেক্ট ধান নিতে পারে না। কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া হয়, কৃষকের ব্যাংক হিসেবে তাদের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হয়।”

তবে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম মনে করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ থাকার সুযোগ রয়েছে।

“কৃষক সরাসরি বাজার এসে যেভাবে ধান বিক্রি করতে পারে, আমাদের কাছে এসে সেইভাবে স্বাচ্ছন্দ্য নাই। ভবিষ্যতে হয়ত আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিতে পারব, যখন আমরা পেডি সাইলো করব।”

কৃষকদের উদ্দেশে সচিব বলেন, “কৃষক যেন তার লটারির স্লিপটা আরেকজনের কাছে বিক্রি না করেন। বিক্রি করলে এই ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী এসে পড়তে পারে। এই জন্য বিষয়টা আমরা কন্ট্রোল করতে পারছি না। কৃষক লটারিতে জয়ী হয়ে যেন কারো কাছে না যায়।”

সরকারের ধান কেনার ‘পয়েন্টগুলো’ প্রান্তিক পর্যায়ে না থাকায় ধান বিক্রি করতে কৃষকের ব্যয় বেড়ে যায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, “আসলেই ধান সংগ্রহ করার জায়গা থাকতে হবে। প্রতি ইউনিয়নে ধান কেনার মত অবস্থা সরকারের নেই। ইউনিয়ন পর্যায়ে কেনার মত অবস্থা বা সরকারের গোডাউনও নেই।

“দ্বিতীয়ত হল- এখন রাস্তাঘাট খুব ভালো, মণে পাঁচ থেকে ১০ টাকা খরচ দিয়ে ধান কেনার পয়েন্টে কৃষক ধান নিয়ে যেতে পারে।”