বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের যাত্রা শুরু

নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে রিজার্ভের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ এর যাত্রা শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2021, 07:58 AM
Updated : 15 March 2021, 01:26 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ তহবিলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এ তহবিল থেকে প্রথম অর্থায়ন করা হচ্ছে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেনটেইনেন্স ড্রেজিং’ প্রকল্পে। সেজন্য এ অনুষ্ঠানে একটি ত্রিপক্ষীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হচ্ছে পায়রা বন্দরকে।

সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ বছর মেয়াদী এই অর্থায়ন হচ্ছে। বন্দরের ড্রেজিংসহ অন্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হবে এই অর্থ।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদেরকে নিজের পায়ে চলতে হবে, নিজেদের অর্থায়নে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করার দরকার আছে।”

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে গতবছর মানুষের জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে পড়া এবং অনেককে হারানোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যেই রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে, আবার আমদানি ব্যয় কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

“এই রিজার্ভের টাকাটাকে আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজে আমরা নিজেরা কীভাবে ব্যয় করতে পারি। সেটাই আমরা চিন্তা করেছি। বারবার শুধু অন্যের কাছে হাত পাতা বা অন্যের থেকে ধার না করে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ দিয়েই নিজেদের অবকাঠামো উন্নয়ন বা সেখান থেকে আমরা যারা আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে, বা দেশি বিদেশি যারাই আসুক, তাদের ঋণ নেওয়ার যে চেষ্টা, সেটা আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থ থেকে ব্যয় করতে পারি।

“তাতে দেশেরও লাভ, আবার আমাদেরও একটা আত্মবিশ্বাস জন্মাবে, আত্মমর্যাদাবোধ আসবে, আর আমরাও যে পারি, সেটাও আমরা বিশ্বের কাছে দেখাতে পারব।”

শেখ হাসিনা বলেন, সেই চিন্তা থেকেই ছয় মাসের আমদানি খরচের টাকা রিজার্ভে রেখে বাকি টাকা কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, সেই পরিকল্পনা তিনি নেন। 

“সেই চিন্তা থেকে নিজস্ব একটা তহবিল গঠন… যে তহবিল থেকে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিতে পারবে এবং আমাদের দেশের অবকাঠামোগুলোর যাতে উন্নয়ন হয়, তার প্রচেষ্টা আমরা করব।”

এ তহবিল থেকে পায়রা বন্দরে অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দরটাও করতে হবে। ইতোমধ্যে মোংলা বন্দরও আমরা চালু করেছি, যেটা বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ ছিল। তাছাড়া আমাদের আরেকটা বন্দর কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে, যা ভবিষ্যতে আরো উন্নত হবে, সেটা হচ্ছে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, সেখানেও কিন্তু একটা সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। আর পায়রা বন্দরটা আমরা নিজের উদ্যোগেই করি।”

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে বাংলাদেশ বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে, সামনে ‘আরও অনেক দেশই হয়ত’ সে সুযোগ পাবে।

“কাজেই ভবিষ্যতে আমরা গভীর সমুদ্র বন্দরও তৈরি করব। এই পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করেই কিন্তু সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠতে পারবে ভবিষ্যতে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ এর উদ্বোধন করার পর তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, “আমাদের বাংলাদেশে একটি নবযুগের সূচনা হয়েছে। আজকে তার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন বিআইডিএফ হতে অর্থায়নের জন্য প্রথম অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং স্কিমটি গ্রহণ করা হয়েছে। ’

এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগ, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ঋণ চুক্তি হয়। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।