দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে চাই গবেষণায় নতুনত্ব: মন্ত্রী

দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে গবেষণায় নতুনত্ব আনার ওপর জোর দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2021, 01:37 PM
Updated : 18 Jan 2021, 01:37 PM

সোমবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বোর্ড অব গভর্নরসের ৪০তম সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, “গবেষণার মাধ্যমে আমরা যদি নতুনত্ব আনতে পারি, আধুনিক উপযোগিতা আনতে পারি, পুষ্টির স্তর উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে আমরা সার্থকভাবে এগিয়ে যেতে পারব। গতানুগতিক পদ্ধতিতে এগিয়ে যাওয়া যাবে না।”

এ বছর দেশে মৎস্য গবেষণায় বড় সাফল্য এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা অকল্পনীয় সাফল্য দেখাতে পেরেছেন। বড় বড় যন্ত্র নেই, বড় অংকের বরাদ্দ নেই, তবু তারা গবেষণায় সাফল্য দেখাতে পেরেছেন। ছোট ছোট দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছ তারা ফিরিয়ে এনেছেন।”

সভায় মন্ত্রী জানান, বৈরালী, বালাচাটা, আঙ্গুস, জাতপুঁটি মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। দাতিনা মাছের প্রজনন কৌশল বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। মাছের দেশীয় প্রজাতি সংরক্ষণে ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ১৪৩ প্রজাতি হচ্ছে ছোট মাছ।

মৎস্য ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশীয় মাছ উৎপাদন হচ্ছে ৩ লাখ ৮৩ হাজার টন। পাবদা, গুলশা, গুজি আইড়, রাজপুঁটি, চিতল, মেনি, ট্যাংরা, ফলি, বালাচাটা, শিং, মহাশোল, গুতুম, মাগুর, বৈড়ালী, ভাগনা, কুচিয়া, খলিশা, কালবাউশ, কই, বাটা, গজার, সরপুঁটি ও গনিয়া- এই ২৩ প্রজাতির মাছ আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

গত বছর দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার।

দেশের দক্ষিণ ও মধ্যপশ্চিম অঞ্চলের খাল-বিল, প্লাবনভূমি, নদী ও বাঁওড় সমৃদ্ধ অঞ্চল, যেখানে অধিকাংশ জলাশয়ে বছরের চার থেকে আট মাস পর্যন্ত এবং কিছু জলাশয়ে সারা বছর পানি থাকে, এসব এলাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ থাকায় এক সময় দেশি কৈ, শিং, মাগুর, শোল, টাকি, রয়না, সরপুঁটি এবং টেংরা ও বাইনসহ আরও অনেক ধরনের মাছে ভরপুর ছিল।

কিন্তু খাল বিল, নদী নালা ভরাট, বেশি হারে মাছ ও শামুক ধরা, কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশীয় মাছ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমিষের চাহিদা বাড়ছে।

তাই দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যার লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের মাছের উৎপাদন ৪ লাখ ৪৬ হাজার টনে উন্নীত করা।

রেজাউল করিম বলেন, “একটা সময় মাছের সঙ্কট শুরু হয়েছিল। রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার, পুকুর, হ্রদসহ অন্যান্য জলাশয়ের অপর্যাপ্ততার কারণে মাছ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। একচেটিয়া এক বিষয়ে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অন্যদিক বিনাশ হয়ে গিয়েছেল।

“সে জায়গায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্য খাতে বিপুল সাফল্য নিয়ে এসেছে। দেশের সকল প্রান্তে দেশীয় প্রজাতির মাছ ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”

অন্যদের মধ্যে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও  বিএফআরআই বোর্ড অব গভর্নরসের সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান) জাকির হোসেন আকন্দ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মুন্সী আবদুল আহাদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহবুবা পান্না সভায় অংশ নেন।