দারিদ্র্য বিমোচনে ‘সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি’

ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মধ্যে করোনাভাইরাস মহামারীর অভিঘাত দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2020, 04:21 PM
Updated : 9 Dec 2020, 04:21 PM

সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্বন্বিত কর্মসূচি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

বুধবার পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সচিব বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমাদের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে দরিদ্র মানুষগুলো ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে চলে যাচ্ছে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে পড়েও বিপুল সংখ্যক মানুষ তার শেষ সম্বল হারাচ্ছে। এসব সমস্যার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ মহামারী। তাই দেশের হতদরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্য সীমার উপরে তুলতে সরকার ও বেসরকারি উভয় দিক থেকেই মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলায় এগিয়ে আসতে হবে।”

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর বিস্তার ঠেকাতে এক মাস ধরে চলা অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো কাজ নেই। তারপরও প্রতিদিন সকালে মিরপুরের পূরবী এলাকায় এসে কাজের আশায় বসে থাকেন সবিতা; মাটি কাটার কাজ করেন তিনি। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফ পরিচালিত ‘প্রসপারিটি প্রকল্প’ নিয়ে এই আলোচনা সভা হয়।

সচিব জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে মোট ৩১ কোটি টাকা জরুরি অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

“একইসঙ্গে কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিকেএসএফ যে আরও ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে হতদরিদ্রদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে এটা খুবই সময়োচিত।”

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এর ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জুডিথ হার্বাটসন এবং ইইউ হেড অব ডেলিগেশন মারিজিও চ্যান বিশেষ অতিথি হিসেবে এতে অংশ নেন।

‘প্রসপারিটি’ নামে পরিচিত ছয়-বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার অতিদরিদ্র খানাভুক্ত ১০ লক্ষ মানুষের অতিদারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত ১৫টি জেলার ৪৩টি উপজেলাভুক্ত প্রায় ২০০টি ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রকল্পের কর্ম এলাকা হিসেবে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারি; দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, পটুয়াখালী ও ভোলা; এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকাভুক্ত জেলা সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জকে নির্বাচন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এসব জেলায় বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আশা ও বিশ্বাস, প্রসপারিটি প্রকল্পটি জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং বাংলাদেশ সরকার গৃহীত ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

প্রকল্পটি প্রথম বছরে ৩০ হাজারের বেশি অতিদরিদ্র খানাকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকায়ন ও পুষ্টি সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে লক্ষিত ১০ লক্ষ মানুষের দোড়গোঁড়ায় প্রকল্পের সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকালে এফসিডিও প্রতিনিধি জুডিথ হার্বাটসন ও ইইউ প্রতিনিধি মারিজিও চ্যান দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের দারিদ্র্যহ্রাসের এ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কর্ম এলাকার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহযোগী সংস্থা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞরা ওয়েবিনানে অংশ নেন।