পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ লাইনে ত্রুটি, আটকে যাবে লরি

পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে রেল সংযোগ লাইন নির্মাণ ত্রুটি পেয়ে আপত্তি এসেছে মূল পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2020, 12:28 PM
Updated : 15 Sept 2020, 12:32 PM

মুল সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, জাজিরা পয়েন্টে নির্মিত রেললাইন যে উচ্চতায় হচ্ছে, তাতে সংযোগ সড়ক দিয়ে সেতুতে ওঠার সময় লরি আটকে যাবে।

একটি পিলারের কারণে এই সমস্যা হয়েছে জানিয়ে রেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, ওটা ঠিক করার জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হচ্ছে।

৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে একইসঙ্গে ট্রেনও চলবে। মূল সেতুর কাজটি সেতু বিভাগের অধীনে বাস্তবায়িত হলেও রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রেল বিভাগ।

পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেলওয়ের কাজে আমরা আপত্তি দিয়েছি।

“কারণ সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার ওপর দিয়ে রেললাইন হচ্ছে, সেখানে তারা উচ্চতা ও পাশে আদর্শ মাপ মেনে কাজ করছে না। ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতা ও ১৫ দশমিক ৫ মিটার পাশে সেতুর উভয় প্রান্তে রাস্তার উপর থাকার কথা, কিন্তু তারা উচ্চতা এর চেয়ে কম দিয়েছে।”

এতে সংযোগ সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হতে পারে জানিয়ে ‍শফিকুল বলেন, “যে মাপ দেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী তাদের কাজ করার কথা, এর চেয়ে কম উচ্চতা ও পাশে কাজ করলে অবশ্যই তাদের পুনরায় অনুমতি নিয়ে নকশা পাশ করিয়ে নিতে হবে। এখানে যেভাবে কাজ করছে, তার যুক্তিও তাদের দেওয়া উচিৎ।”

সমস্যাটির ব্যাখ্যায় পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ঊর্ধবতন এক প্রকৌশলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমস্যাটা মূল সেতুতে নয়, সমস্যা তৈরি হয়েছে ভায়াডাক্ট বা রেল ও মূল সেতু সংযোগ সড়কে। সেতুর দুই প্রান্তে রাস্তার উপর দিয়ে টানা হচ্ছে রেললাইন। সেখানে উচ্চতা কম করে কাজ করা হচ্ছে।”

তিনি উদাহারণ দিয়ে বলেন, “কোনো রাস্তায় উপর যদি ফ্লাইওভার করা হয়, আর সেখানে যদি উচ্চতা কম থাকে, তাহলে নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচল সমস্যা হবেই, বড় ট্রাক বা লরি চলাচলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রেল সংযোগ প্রকল্পের ঊর্ধবতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাজিরা পয়েন্টে একটি পিলার কম উচ্চতায় করা হয়েছিল। যেখানে ৫ দশমিক ৭ মিটার করার কথা, সেখানে ৫ দশমিক ৫ মিটার করা হয়েছে।

“বিষয়টি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা সমাধান করা হবে।”

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ভাঙ্গা, নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেল সংযোগ প্রকল্প চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) প্রকল্পটির কাজ করছে।

পিলার সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাওয়া বা সমস্যা তৈরি হবে না বলেও দাবি করেন রেল প্রকল্পের ওই কর্মকর্তা।

আকাশ থেকে দেখা নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু। ছবি: সাদ আব্দুল্লাহ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ২০২২ সালের আগে নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না বলে গত মাসে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল।

মোট ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল এই সেতুটি কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিশাল রেল সংযোগ প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন।