মহামারীর মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশটি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় চার ভাগের এক ভাগ হারিয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এপ্রিল-জুন সময়ে ভারতের অর্থনীতি ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ১৯৯৬ সালে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থনীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ শুরুর পর এটাই জিডিপির সর্বোচ্চ সংঙ্কোচন, যেটাকে আশঙ্কাতীত বলছেন অনেক বিশ্লেষক।
জুলাই-সেপ্টেম্বরে অর্থনীতির এই সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন তারা। এর ফলে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে কবলে পড়তে পারে।
হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মহামারীর প্রকোপের আগে গত অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) ভারতের জিডিপিতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, যা তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকে যেখানে শিল্প খাত ও নির্মাণ খাত যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়েছে, সেখানে সব কিছুর উপরে কৃষি খাতই একমাত্র আশা জাগিয়েছে।
পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১১-২০১২ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির আকার স্থিরমূল্যে ২৬ দশমিক ৯০ লক্ষ কোটি রুপি প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৩৫ দশমিক ৩৫ লক্ষ কোটি রুপি। সে হিসেবে প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার লিখেছে, এর ফলে দেশের জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ মুছে গিয়েছে বলা যায়।
সরকারের শীর্ষমহলের ব্যাখ্যা হলো- লকডাউনের কারণে অধিকাংশ কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় এই সঙ্কোচন প্রত্যাশিত। আমেরিকা, জাপান বা ব্রিটেনে সঙ্কোচনের হার এর থেকেও বেশি।
কিন্তু অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, শুধু এপ্রিল থেকে জুন নয়। এর পরেও অর্থনীতির সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে। পরিসংখ্যান বলছে, এই তিন মাসে নতুন লগ্নি ৪৭% কমেছে। ইতিহাসে এই প্রথম।
রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের আশঙ্কা, স্বাধীনতার পর চতুর্থবার মন্দার সম্মুখীন ভারত এবং এই মন্দা হয়তো সবচেয়ে মারাত্মক হবে।
সংস্থাটি মনে করে, পরের প্রান্তিকগুলোতে অর্থনীতি যদি খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও পুরো অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি ৫ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হতে পারে।
২৫ মার্চ থেকে ভারতজুড়ে লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১ জুন থেকে ধীরে ধীরে লকডাউন তোলা শুরু হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানায় উৎপাদন, কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন গতি আসেনি।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, অর্থনীতিতে মহামারীর প্রভাব কমাতে কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ দফায় মোট ২১ লক্ষ কোটি টাকার যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, অর্থনীতিতে তার কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি।
কয়েক মাস ধরে মানুষের ভোগব্যয় কমা নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগের মধ্যে গত এপ্রিল-জুন মাসে এই খাতে ব্যয় অর্ধেকের বেশি (৫৪.৩%) কমেছে। অথচ ২০১৯ সালের একই সময়ে ভোগব্যয় বেড়েছিল ৫৬.৪%।
আয়, কর্মসংস্থান হারিয়ে মানুষের ভোগব্যয় কমার ফলে বাজার থেকে চাহিদা উবে গিয়েছে। গাড়ি-বাড়ির মতো অনাবশ্যক পণ্যের বিক্রি ব্যাপক কমেছে। এর থেকেই বোঝা যায়, মহামারীতে মানুষ খরচে কতটা সাবধানী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মানুষের মন থেকে ভবিষ্যত আয় নিয়ে শঙ্কা না কাটা পর্যন্ত তারা অনাবশ্যক খরচ করতে সাহসী হবেন না এবং বাজারে চাহিদাও ফিরবে না।