প্রাকজাহাজীকরণ: শিথিলের তিনদিন পর ঋণের নতুন শর্ত

মহামারী করোনাভাইরাসের ক্ষতি সামলে উঠতে রপ্তানিকারকদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম) করেছিল, সেখান থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত শিথিল করার তিনদিন পর নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2020, 02:07 PM
Updated : 29 August 2020, 02:07 PM

নতুন শর্তে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রাক জাহাজীকরণ ঋণ পেতে এলসি, রপ্তানির আদেশ ও চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী পণ্য রপ্তানি হবে- মর্মে গ্রাহককে ব্যাংকে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। এছাড়া গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি প্রতিবেদন, বকেয়া রপ্তানি বিলের তথ্য ও আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট রেটিং রিপোর্ট দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রাক জাহাজীকরণ ঋণের নতুন সার্কুলারে আগের শিথিল করা বিষয়গুলো বহাল রাখা হয়েছে। তবে এতে নতুন করে আরও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। আবার কিছু খাতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

সার্কুলারে একটি শর্ত শিথিল করে বলা হয়েছে, এই ঋণ বিতরণের পরের সপ্তাহের মধ্যে পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আগে ছিল যে সপ্তাহে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ওই সপ্তাহেই আবেদন করতে হবে। আবেদনের সীমা বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলো বাড়তি সময় পেল। ফলে তারা ধীরেসুস্থে আবেদন করতে পারবে।

সার্কুলারে নতুন যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাকজাহাজীকরণ ঋণ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গ্রাহকের হালনাগাদ সিআইবি রিপোর্ট, গ্রাহকের নামে কোনো বকেয়া রপ্তানি বিল আছে কিনা সে তথ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত কোনো সংস্থা থেকে ক্রেডিট রিপোর্ট সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। আগে এসব শর্ত ছিল না।

বৃহস্পতিবারের সার্কুলারে আরও বলা হয়, প্রতিটি দফায় রপ্তানির এলসির বিপরীতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হবে এবং কাঁচামালের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থায়ন করতে হবে। রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য জাহাজীকরণের আগ পর্যন্ত সব পর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাংকগুলোকে তদারকি করতে হবে।

রপ্তানি খাতে কম সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে গত ১৩ এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে। এ তহবিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে তিন শতাংশ সুদে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রপ্তানিকারকদের দেবে ছয় শতাংশ সুদে।

গত ২৪ অগাস্ট জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছিল, এই তহবিল থেকে ঋণ পেতে আগের মত অত বেশি দলিলপত্র দিতে হবে না। সহজে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি দলিল দেখিয়েই ঋণ পাওয়া যাবে।

ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলা করে রপ্তানি খাত যাতে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য এ সংক্রান্ত নীতিমালা শিথিল করে রপ্তানিকারকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী এই ঋণ পেতে আবেদনের সঙ্গে নয় ধরনের দলিলপত্র জমা দিতে হত। এর মধ্যে ছিল- ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত সনদ বা মঞ্জুরিপত্র, ঋণ বিতরণের বিবরণী, সুদসহ মূল অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকারপত্র, রপ্তানি আদেশের কপি, ঋণপত্রের কমার্শিয়াল ইনভয়েস, বিল অব ল্যান্ডিং, এয়ারওয়ে বিল বা কার্গো রিসিপ্ট, বিল অব এক্সপোর্ট এবং রপ্তানি পণ্য তৈরি সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র।

২৪ অগাস্টের সার্কুলারে বলা হয়, প্রাকজাহাজীকরণ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ পেতে চার ধরনের দলিলপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত সনদ বা মঞ্জুরিপত্র, ঋণ বিতরণের বিবরণী, সুদসহ মূল অর্থ পরিশোধের অঙ্গীকারপত্র এবং রপ্তানি আদেশের কপি।

আগের মত ঋণপত্রের কমার্শিয়াল ইনভয়েস, বিল অব ল্যান্ডিং, এয়ারওয়ে বিল বা কার্গো রিসিপ্ট, বিল অব এক্সপোর্ট ও রপ্তানি পণ্য তৈরি সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে না।