শিল্পায়নে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে কৃষির পাশপাশি শিল্পায়নে গুরুত্ব দিতে হবে, কিন্তু সেই শিল্পায়ন করার সময় প্রাকৃতিক ভারসাম্যও রক্ষা করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2020, 11:50 AM
Updated : 20 August 2020, 11:50 AM

বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নির বডির সভায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সাথে সাথে শিল্পায়নও আমাদের প্রয়োজন। কারণ শিল্পায়ন বা শিল্পের বিকাশ ছাড়া কোনো দেশ অগ্রগতি লাভ করতে পারে না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পায়ন না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মানুষের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি বাড়ানোর জন্যও শিল্পায়ন জরুরি। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার শিল্পায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

“আবার আমাদের এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের দেশ ভূখণ্ডের দিক থেকে অত্যন্ত ছোট হলেও, আমাদের জনসংখ্যা অনেক বড় এবং এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

“খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের যেমন কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। আবার প্রকৃতির সঙ্গে আমরা যেন চলতে পারি… কারণ বাংলাদেশ একটা ডেল্টা।”

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা, এটাও একান্তভাবে অপরিহার্য। সেদিকেও যেমন আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, সাথে সাথে কর্মসংস্থান আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।”

তিনি বলেন, শিল্পায়নের জন্য বড় সমস্যা ভূমি। পাশাপাশি ফসলি জমি ও বনভুমিও রক্ষা করতে হবে। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।   

“এখন অনেক বিনিয়োগ- এটা সব সময় এদেশ থেকে ওদেশে ঘুরতে থাকে। আমরা যত বেশি আনতে পারি আমাদের জন্য ভালো। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগও যেমন আসবে, আবার দেশেও আমাদের যাদের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা আছে, তারাও যেন বিনিয়োগ করতে পারে বা আমাদের যারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, তাদেরকেও আমরা যেন উৎসাহিত করতে পারি।

“অর্থাৎ আমাদের যুব সমাজকে যেন আকৃষ্ট করতে পারি, তাদের উৎসাহিত করতে পারি। শুধু চাকরির পেছনে ছোটা না, নিজেরা কিছু করে দেখানো, কাজ করা। সেই দিকে আমাদের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করতে হবে। তো সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।”

ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ‘অনেক অগ্রগতি’ বাংলাদেশ অর্জন করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশা করি সামনে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব আমরা।”

সরকার প্রধান বলেন, সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট লেখা আছে, সরকারি আর বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সমবায়ও থাকবে।

“অর্থাৎ একটা অর্থনীতির চাকা (সচল রাখার) জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা যেন থাকে, যাতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালি হয়, মজবুত হয় এবং আত্মনির্ভরশীল হয়, আমরা সেই আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।” 

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সব ধরনের কাজ করা যাচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব- সেই ঘোষণাটা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছিলাম বলেই আজকে এই সুযোগটা আমরা পেয়েছি।”

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় করোনাভাইরাস মহামারী অনেক ক্ষেত্রে ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছিল। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী… আমাদের লক্ষ্যই ছিল ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এর মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম… আমরা ইতোমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। কাজেই আমাদের লক্ষ্য ছিল যে আমরা হয়ত সামনে আরো এগিয়ে যাব। 

“করোনাভাইরাস শুধু আমাদের দেশ না, পুরো বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে। সারা বিশ্বেই মানুষ আজকে নানাভাবে কষ্ট পাচ্ছে এবং তার প্রভাব আমাদের দেশেও এসে পড়েছে।”

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা এ সভায় স্মরণ করার পাশাপাশি স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে জাতির পিতার বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এমন কোনো দিক নাই, যেটা তিনি এই অতি অল্প সময়ের মধ্যে না করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা দেখেছি হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়, ঠিক পাকিস্তানি কায়দায়।

“আইয়ুব খান যেভাবে একদিকে সেনাপ্রধান, অপরদিকে রাষ্ট্র্রপ্রধান, ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশেও শুরু হয়ে গেল… গণতন্ত্র হত্যা করা এবং সোনাশাসন। যার ফলে বাংলাদেশে সেই কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হয়নি।”

বাঙালি দীর্ঘদিন ‘অবহেলিত এবং পরনির্ভরশীল’ ছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্যের কাছে হাত পেতে চলতে হত, এমনকি বাজেট প্রনয়ন করতে… কোনোক্ষেত্রেই কিন্তু আমাদের কোনো কাজ নিজেরা করার মত সক্ষমতা ছিল না। এমন একটা অবস্থার মধ্যে বাঙালিকে ফেলে দিয়েছিল।”

স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা ছিল, তারা ক্ষমতায় না থাকার কারণে বাংলাদেশ ‘আদর্শ বিচ্যুত হয়েছিল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “স্বাধীনতা যেন অর্থবহ না হতে পারে, সেজন্য নানা ধরনের কূটকৈৗশল পরিচালনা করা হত। … আমরা দেখেছি, স্বাধীনতাবিরোধী, আলবদর, রাজাকার, আল শামস করে যারা আমাদের মা-বোনের ইজ্জত লুটেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, তাদেরকেই মন্ত্রী, উপমন্ত্রী করা হয়েছিল।”

২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল, আমরা আত্ননির্ভরশীল হব।”