দেশের ১২ জেলায় বিদেশফেরত অভিবাসীদের উপর জরিপ চালিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম এই চিত্র পেয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
আইওএম বলছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশফেরত মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছে। সাক্ষাৎকারে ৫৫ শতাংশ বিদেশফেরত জানান, তাদের উপর ঋণের বোঝা রয়েছে।
এসব ঋণগ্রস্তদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবার ও বন্ধুর কাছে, ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), স্বেচ্ছা সহায়তা গোষ্ঠী ও এনজিওর কাছে ঋণগ্রস্ত এবং ১৫ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ের পাওনাদারের কাছে ঋণগ্রস্ত।
ঋণগ্রস্থদের মধ্যে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে ৮৬ শতাংশ বিনা সুদে ঋণ নিয়েছেন। এমএফআই, এনজিও ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে নেওয়া ৬৫ শতাংশকে ঋণের জন্য সুদ বহন করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ।
মহাজন বা সুদে টাকা ধার দেন এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঋণগ্রহীতাকে সুদ গুণতে হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
জরীপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশ আবার অভিবাসনে আগ্রহী। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই মহামারীর আগে যে দেশে কাজ করতেন সেখানেই ফিরতে চান।
অপরদিকে ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আরো ভালো বেতনের চাকরি নিশ্চিতে তাদের দক্ষতা বাড়াতে আগ্রহী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ‘রিজিওনাল এভিডেন্স ফর মাইগ্রেশন অ্যানালাইসিস অ্যান্ড পলিসি (রিমেপ)’ প্রকল্পের আওতায় সরকারের সাথে সমন্বয় করে মে ও জুলাই মাসে উচ্চ অভিবাসনপ্রবণ দেশের ১২টি জেলায় একহাজার ৪৮৬ জন বিদেশফেরত অভিবাসীর উপর এই জরিপ চালায় আইওএম।
জরিপের ভিত্তিতে ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট অব নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত প্রবাসীদের আয়। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার, টাকার অংকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছে।
আর জুলাইয়ে দেশে ২৬০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ। দেশে স্বজনদের বাড়তি চাহিদা পূরণে এবং অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে দেশে ফিরতে জমানো সব অর্থ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে রেমিটেন্স বেড়েছে।
রেমিটেন্সের এই রেকর্ড কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অগাস্ট মাসের রেমিটেন্সের নেতিবাচক চিত্র মিলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আইওএম বাংলাদেশ প্রধান প্রতিনিধি গিওরগি গিগাওরি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সবচেয়ে বিপদাপন্ন গোষ্ঠীদের মধ্যে রয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। বৈশ্বিক চলাচলের উপর আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞা ও মহামারী সৃষ্ট মন্দার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী এবং রেমিটেন্সনির্ভর জনগোষ্ঠীর উপর।