আটকেপড়া লাখো প্রবাসী শ্রমিক চরম অনিশ্চয়তায়

২০০৮ সালে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের ছোট কালিয়াকৈর গ্রামের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী মো. রেজাউল ইসলাম।

গোলাম মুজতবা ধ্রুব নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2020, 04:01 PM
Updated : 9 July 2020, 04:48 PM

সেখানে গিয়ে মাসে সাড়ে পাঁচশ রিয়েল বেতনে মেলে ট্রাফিক সিগন্যালে ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর কাজ। এই টাকা দিয়েই গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচ, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা ও স্ত্রী-সন্তানের খরচ মেটাতেন তিনি।

রেজাউল ইসলাম জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন। মার্চের ২০ তারিখে সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তার আগেই বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এজন্য প্রায় চার মাস ধরে দেশে থাকলেও এখানে তার আয়ের কোনো পথ নেই। এদিকে এই কয় মাসে দেশে থাকায় পরিবারের খরচ মেটাতে তাকে আবারও প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিতে হয়েছে।

ঋণের টাকা কবে কীভাবে শোধ করবেন- তা নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকা রেজাউল বলেন, “ফ্লাইট চালু হলে হয়ত ওই দেশে ফিরে যেতে পারব। সেখানে গিয়ে আয় করে ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারব। কিন্তু কবে যেতে পারব, তারই তো ঠিক নেই। আর কতদিন ঋণ নিয়ে চলতে পারব, তাও তো জানি না।”

রেজাউলের মতো সিঙ্গাইরের আরেক বাসিন্দা মো. শাহীনও (৩৫) ২০১০ সালে শ্রমিক হিসেবে কাতারে গিয়েছিলেন আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ঋণ, জমি বিক্রি ও সুদে টাকা নিয়ে। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে তিনিও ছুটিতে এসে দেশে আটকা পড়েছেন।

শাহীন জানান, ফেব্রুযারিতে ছুটি নিয়ে দেশে আসার পর এপ্রিলে তার ফেরার কথা থাকলেও এখন আর ফিরতে পারছেন না। উল্টো বেঁচে থাকার জন্য আবারও তাকে স্বজনদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।

“কাতারে গিয়েছিলাম ঋণ করে। সেখানে থেকে যা আয় করতাম তা দিয়েই স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের খরচ চালাতাম। কিন্তু ছুটিতে দেশে এসে এখন আর ফিরে যেতে পারছি না। এখন ঋণ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। জানি না কতদিন ঋণ পাব।”

রেজাউল ও শাহীনের মতো প্রবাসী কর্মীদের আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বিদেশে থাকা এমন কর্মীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।

এর মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক মহামারীর মধ্যে দেশে এসে আটকা পড়েছেন বলে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদের জন্য গত মার্চের প্রথম দিকে মহাখালীর আইইডিসিআরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কুয়েত গমনেচ্ছুরা।

তারা বলছেন, এই শ্রমিকেরা দেশে ফিরে যেমন ‘মানবেতর জীবনযাপন করছেন’ তেমনি ভিসাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক হওয়ার পরেও আরও অন্তত লক্ষাধিক শ্রমিকের বিদেশযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরীফুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর আগে যখন ফ্লাইট চলাচল ছিল অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক দেশে ছুটিতে এসেছিলেন। যারা এখনও যেতে পারেননি। এরপর যখন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেল তখন গত দুই মাসে চার্টার ফ্লাইটে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দেশে আসেন।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক বিদেশে যেত। সেই হিসাবে করোনার কারণে যদি বলি তাহলে আমাদের মার্চ থেকে জুন এই চার মাসে প্রায় দুই লাখ কর্মী বিদেশ যেতে পারেননি। অন্তত লাখখানেক কর্মীর ভিসা, পাসপোর্ট সব কিছু থাকার পরও তারা করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশে যেতে পারেননি।

“যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কিন্তু কোনো দেশ আমাদের কর্মী নেবে না। তাই অন্যান্য দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শেষ হবে, সেই সময়ের মধ্যে আমাদের পরিস্থিতিটাও যেন শেষ হয়। এটা আমাদের করতেই হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের কর্মী নেবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকে।”

শরীফুল হাসানের এই শঙ্কা এরইমধ্যে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। গত মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হওয়ার পর ইতালিতে ফিরতে শুরু করেন প্রবাসীরা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে হাজারখানেক বাংলাদেশি ইতালিতে পৌঁছেছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশের করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় দুই দিন আগেই বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করেছে ইতালি।

এরপর বুধবার দেড় শতাধিক বাংলাদেশি কাতার এয়ারওয়েজের দুটি ফ্লাইটে ইতালিতে পৌঁছালে তাদের উড়োজাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি। ওই দুই বিমানে করেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট-রামরুর প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালক মেরিনা সুলতানা।

সে কারণে দেশে তাদের অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসছেন তাদের জন্য সরকার এরইমধ্যে সহায়তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা যেতে পারছে না, যাদের এই মুহূর্তে কাজ নেই, আয় নেই তাদের বেঁচে থাকার জায়গাটাকে খুব দ্রুত দেখা দরকার।

“এছাড়াও যারা ফিরে এসেছেন তাদের প্রয়োজনে বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলে সেই দেশে বা অন্য কোনো দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে।”

মেরিনা সুলতানা বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা নিয়ে ২০১৬ সালে যে আন্তর্জাতিক বিধিমালা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, যে কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকরা যে দেশে অবস্থান করবেন ওই দেশ তাকে সুরক্ষা দেবে।

সেই বিধিমালার আলোকে যারা বিদেশে কাজ করছে তারা যেন সুরক্ষা পায় সেজন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান তিনি।

উদ্বেগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক-কর্মীরাও

বিদেশে লোক পাঠানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজেদের টিকে থাকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারাও ‘অত্যন্ত দুর্বিষহ’ সময় পার করছেন। পাশাপাশি রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

তিনি জানান, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে এমন ১৬০০ এজেন্সিতে অন্তত ৪০ হাজার কর্মী রয়েছে, যাদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে এজেন্সি মালিকদের আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়।

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে চার মাসে কোনো আয় না থাকায় তাদের অন্তত ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন শামীম আহমেদ।

কুয়েতে যেতে স্বাস্থ্য সনদের জন্য মার্চে মহাখালীর আইইডিসিআরে অপেক্ষা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ সৌদি আরবে যান। এর বাইরে দুবাই, কুয়েত, কাতারসহ কয়েকটি দেশেও বেশ সংখ্যক শ্রমিক যান।

বায়রা সাধারণ সম্পাদক শামীম বলেন. বিশ্বের অন্তত ১৬১টি দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। প্রতি বছর অন্তত সাত লাখ লোক কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে অন্তত এক লাখ নারী কর্মী নিজেদের কোনো খরচ ছাড়াই বিদেশে যান। তাদের বিদেশ যাওয়ার খরচের টাকা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সেই দেশের মালিকদের থেকে সংগ্রহ করেন। সেই হিসাবে এক লাখ নারী শ্রমিকের খরচ বাবদ প্রতি মাসে এই খাতে অন্তত ৯০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা গত চার মাস বন্ধ রয়েছে।

এছাড়াও করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশে অন্তত এক লাখ কর্মী ফেরত এসেছেন। তারা আবার ফিরে যেতে পারবেন কি না সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

এদের বাইরে আনুমানিক আরও এক লাখ শ্রমিকের বিদেশ যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার নির্ধারিত দামের হিসেবে প্রতি ভিসার জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরলেও এই খরচ দাঁড়ায় ১৫০০ কোটি টাকা। এখানে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশে যেতে পারবেন কি না সন্দেহ রয়েছে।

“তাহলে অন্তত দুই লাখ শ্রমিক বিদেশে যেতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত। তাছাড়া যারা এই খাতে কাজ করছেন এমন অন্তত ৪০ হাজার লোকও তাদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। অর্থাৎ এই পরিস্থিতি থাকলে প্রায় তিন লাখ লোকের জীবন ও জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকছে।”

বর্তমানে রিক্রটিং এজেন্সির মালিকরাও ‘ভালো নেই’ বলে জানিয়েছেন বায়রার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আল রাবেতা রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মো. আবুল বাশার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজ খরচে আমার এজেন্সি থেকে সৌদি আরবের ভিসার জন্য ১৫০ জনের অর্ডার করেছিলাম। এদের মধ্যে ৮০ জনের সৌদি অ্যাম্বাসি থেকে স্ট্যাম্পিং করানোর পর এখন সবার ভিসার মেয়াদই শেষ। এই ভিসার মেয়াদ সৌদি সরকার না বাড়ালে আমরা যারা রিক্রুটিং এজেন্সি তারা বিপদে পড়ে যাব।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি রিক্রুটিং এজেন্সির একজন কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যা চলছে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের চাকরি থাকবে বলে মনে হয় না। তখন আমরা কী করব, কই যাব? কীভাবে চলব?”

গালফ অ্যাসোসিয়েটস নামের আরেকটি রিক্রুটিং এজেন্সির এজেন্ট মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “চার মাস ধরে কাজ না থাকায় বনানীতে অফিস ভাড়া বাবদ ৪০ হাজার টাকা দিতে পারছি না। ঢাকার ভাড়া বাসার জন্য ১৫ হাজার টাকা না দিতে পেরে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছি। কারণ আপতত একটা পয়সাও আয় নেই।”

এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে বেশ কয়েক দাবি তুলে ধরেছেন বায়রার সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী নোমান।

তার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথমত, কোনো শ্রমিককে যেন বিদেশ থেকে ফেরত না পাঠানো হয় সেই উদ্যোগ নেওয়া। দ্বিতীয়, যেসব শ্রমিক দেশে ফেরত আসবেন তাদের আবারও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলে দেশে কিংবা বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, কর্মীরা বিদেশে যে বিভাগে কাজ করতেন দেশে আসার পর তারা যেন সমন্বিতভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন সেজন্য সরকারের প্রণোদনার টাকা এককভাবে কাউকে না দিয়ে যৌথভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং চতুর্থত, দেশে ফেরা কর্মীদের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে তাদের ভবিষ্যতের জন্য বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে কাজ করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিদেশে যাওয়ার জন্য দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা।

দায়িত্বশীলরা যা বলছেন

বিদেশফেরত শ্রমিকদের পুনর্বাসনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো কর্মীকে যদি বিদেশ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সে যদি আবারও বিদেশে যেতে চায়, তার যদি বয়স থাকে, ইচ্ছা থাকে তাহলে তাদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠাব। আর যদি সে না যেতে চায় এবং এই দেশে কিছু করতে চায় সরকার কিন্তু সেই ব্যবস্থাও করছে।

“সরকারের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকা দিয়েছে। যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসবেন তারা এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন, এই অর্থ দিয়ে তারা এই দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। পাশাপাশি ৫০০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেবেন। এটাও এর সাথে যোগ হচ্ছে।”

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, “আমরা এরইমধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে তারা যেন কাঙ্ক্ষিত দেশে কাজের জন্য যেতে পারেন সেজন্য বাংলাদেশে অবস্থানরত সেই সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি যাদের যে দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়া হয়েছে তারা কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সেই সব দেশে যেতে পারবেন।”

যাদের ভিসার মেয়াদ রয়েছে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলে তাদের বিদেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।