মহেশখালীর পশ্চিমাংশে বঙ্গোপসাগরে দ্রুত সাশ্রয়ীভাবে জ্বালানি তেল খালাসের উদ্দেশ্যে চলমান ‘ইনস্টলেশন অব সিংগেল মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটির আবারও সংশোধন করেছে সরকার।
Published : 06 Jul 2020, 06:53 PM
জ্বালানি তেলে খালাসে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটির মেয়াদ আরও আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ করার নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির এই সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়।
একনেকের এই ভার্চুয়াল সভায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি শেরে বাংলা নগরে নিজের দপ্তরে ফিরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান।
প্রকল্পটির কার্যপত্রে দেখা যায়, মেয়াদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি শুরু হওয়ার সময় বাংলাদেশী মুদ্রার বিপরীতে ডলার এবং ইউরোর মান বৃদ্ধির পাওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় ৪৫৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা বাড়ছে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) চায়না এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শুরু থেকেই গতি না পাওয়ায় মেয়াদের মধ্যে শেষ করতে না পারায় ৪৯০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এরপর প্রকল্পের চার বছর মেয়াদেও প্রকল্প শেষ করতে না পারায় আবারও দ্বিতীয় বারের মতো সংশোধন করা হল।
অর্থাৎ দুই বার সংশোধনীর মাধ্যমে এ প্রকল্পটির ব্যয় ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা বাড়ানো হল। আর মেয়াদ বাড়ল ৪ বছর।
দেশে জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৫ মিলিয়ন টন হাই স্পিড ডিজেল আমদানি করতে হয়। এছাড়া আন্তঃদেশীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি পরিমাণ তেল আমাদানির প্রয়োজন পড়বে বলে বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাংকারগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না।
যার ফলে এসব ট্যাংকার গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়।
এভাবে ১১ দিনে একটি এক লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাংকার খালাস করা যায়। গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় এইচএসডি স্থানান্তরের জন্য পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
মহেশখালীর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মাতারবাড়ি এলটিই পর্যন্ত এবং সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে তেল জমা হবে।
এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দু’টি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে।
এরপর মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক ফার্ম থেকে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের মাধ্যমে দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল ইআরএলে ডেলিভারি করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সোমবারের বৈঠকে সংশোধনী এবং নতুনসহ মোট নয়টি প্রকল্পের জন্য ২ হাজার ৭৪৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা জোগান দেওয়া হবে, প্রকল্প সহায়তা থেকে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৪৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আসবে।
প্রকল্পগুলো
>> ‘ঘোড়াশাল ৩য় ইউনিট রি পাওয়ারিং’ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। প্রকল্পটি ৪৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
>> ‘নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলাধীন ৩টি প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং আব্রাই নদীর ড্রেজিংসহ তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ১৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
>> ‘দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পূনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহর সংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৩২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
>> ‘গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পাঁচপূর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সাথে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ’ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। এতে ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে ১৫৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
>> ‘রুপগঞ্জ আবাসন সংযোগকারী সড়ক উন্নয়ন’ (১ম সংশোধনী) প্রকল্প। এতে ব্যয় বাড়ছে ৪৯ কোটি ৩৪ন লাখ টাকা।
>> ‘জামালপুর শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ (১ম সংশোধনী) প্রকল্প।এতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
>> ‘চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর উপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ১০৭ কোটি টাকা।
>> ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবেট মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম’ (২য় সংশোধনী) প্রকল্প।এতে ব্যয় বেড়েছে ২৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা।