অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সোমবার এই আদেশে বলেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ এখন থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত রাখা হবে, তাতে সুদ হার হবে ৬ শতাংশ।
বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ হারে রাষ্ট্রমালিকাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে মেয়াদী আমানত রাখা রাখা যাবে।
দুর্দশায় পড়া বেসরকারি ব্যাংক খাতে অর্থ যোগানোর পাশাপাশি এক অংকের সুদ হার বাস্তবায়নের চেষ্টায় সরকারের নতুন এই আদেশ এলো।
এই সিদ্ধান্ত যে আসছে তা আগেই জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত ১ জানুয়ারি এক সভায় তিনি বলেছিলেন, ব্যাংকের সুদ হার বেঁধে দেওয়ার পর আমানতকারীরা যাতে সরকারি ব্যাংকের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে, তা ঠেকাতে বেসরকারি ব্যাংকে আমানতের মুনাফা বেশি থাকবে।
“সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে যদি সুদ হার ৬ শতাংশ করে দেওয়া হয়, তাহলে সবাই সরকারি ব্যাংকে টাকা রাখবে। তাই সরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের সুদ হার হবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদ হার হবে ৬ শতাংশ “
সরকারি সংস্থাগুলো আগে তাদের তহবিলের ৭৫ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এবং বাকি ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখত। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি ব্যাংককে আরও বেশি সুবিধা দিতে এই অনুপাতে পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দেন।
সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার পথ তৈরি করে।
সেখানে বলা হয়, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে রাখা হলে বাকি ৫০ শতাংশ রাখা হবে বেসরকারি ব্যাংকে। এই সিদ্ধান্ত ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
সেই সার্কুলারের সূত্র ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা শাখা থেকে জারি করা সোমবারের আদেশে বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানতের
বলা হয়েছে, “বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রাপ্ত অর্থ, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সরকার মালিকানাধীন কোম্পানির নিজস্ব তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি ব্যাংক অথবা অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
“কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। সে প্রেক্ষিতে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, উল্লিখিত উৎসসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ হারে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে এবং মোট উদ্বৃত্ত অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ হারে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মেয়াদী আমানত রাখা যাবে।
“তবে প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবিষ্য তহবিলের অর্থ, পেনশন তহবিলের অর্থ এবং এন্ডাউমেন্ট ফান্ডের অর্থ এর আওতা বহির্ভূত থাকবে।”
২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রের ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার হাতে দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা আছে, যা অলস পড়ে আছে।
বিভিন্ন ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে রাখা ওই টাকা রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে একটি আইনের খসড়ায় সেদিন অনুমোদন দেয় সরকার।