তিনি বলেছেন, গত দশ-এগারো বছরে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সফলতা এসেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি অর্জিত হচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বেড়েছে ক্রয় ক্ষমতা, যার মধ্য দিয়ে দেশের ভেতরেই একটি বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
“কিন্তু ব্যাংকিং খাতে এ সবের ইতিবাচক ছোঁয়া লাগেনি। উল্টো দিন যত যাচ্ছে অবস্থা ততোই খারাপ হচ্ছে। বিশাল অংকের খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ব্যাংকগুলো। একটার পর একটা অনিয়ম-ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে এ সব ঘটত না।”
গত ২৫ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ফজলে ফাহিম। ব্যাংক খাতের সমস্যা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, পুঁজিবাজার ও দ্রব্যমূল্য নিয়েও কথা বলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: ব্যাংকিং খাতের এই দুরাবস্থা এক দিনে হয়নি। এই খাতকে নিয়ে অবহেলা করা হয়েছে, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই এমনটা হয়েছে। এখানে একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি বলেই এমনটা হয়েছে।
সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রোপার মনিটরিং যেটা থাকা দরকার সেটা করা হলে বা উনাদের যে দায়িত্ব সেটা ঠিকমতো পালন করলে ব্যাংকিং সেক্টরে সমস্যা হত না। এ জায়গায় উনাদের (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের) করণীয় অবশ্যই অনেক কিছু আছে। আর ইনভেস্টর হিসেবে আমাদের যে চ্যালেঞ্জ সেটা হল, হাতেগোনা কিছু মুষ্টিমেয় ব্যক্তি অথবা কর্পোরেট হাউজই ব্যাংক থেকে শুরু করে সব জায়গায় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের জেলা বলেন, শহর বলেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
ব্যাংক ঋণ, পোর্ট ব্যবহার, সিঅ্যান্ডএফ সুবিধা, রাস্তায় মালামাল পারাপারে অযথা হয়রানি-অরাজকতা অনেক সময় আমরা দেখি এগুলো সব সিস্টেমেটিক্যালি অ্যাড্রেস করা উচিত।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক এটা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে। এই যে জিনিসগুলো, বিশ্ব ব্যাংকের যে ছক আছে সেটাকে ফলো না করে এই ছোট ছোট বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দেখে তাহলে বিশ্ব ব্যাংকের ছকে আমরা এমনিতেই এক নম্বর থাকব।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ (নয়-ছয়) করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না কেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে বসে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো এখনও সেটা আমলে নেয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কিছুটা কমাতে শুরু করেছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখনও সেভাবে করেনি। এখানে একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যাংকের চড়া সুদের কারণে অনেক প্রকল্প ফেইল করে। আবার অনেক সময় ব্যাংক সময়মতো উদ্যোক্তাকে টাকা দেয় না, দিলেও প্রয়োজনের কম দেয়। বর্তমান পেক্ষাপটে একটা উদাহরণ দেই, দেশের বেশিরভাগ চাল কল চাপের মুখে আছে। তার মেশিন আছে ২০ কোটি টাকার। তাকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিচ্ছে দুই কোটি টাকা। ২০ কোটি টাকার ক্যাপাসিটিতে দুই কোটি টাকার প্রডাক্ট কিনলে ‘হাউ ডু ইউ সারভাইভ?’। ইউ ক্যান নট…।
এখানে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় যেটি সেটি হল, উপরের পর্যায়ে যারা আছে, তারা শুনছে, বুঝছে। জেলা পর্যায়ে আচরণ-ব্যবহার খুবই বেদনার। ব্যাংকের অফিসার বলেন, কিছু কিছু জেলা প্রশাসক বলেন অথবা সরকারের অন্য কোনো বিভাগের কর্মকর্তা-সবাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন দেখলে মনে হয়, তারা জমিদার আর সাধারণ নাগরিক আর ব্যবসায়ীরা যেন প্রজা। এটা হতে পারে না।
তার সাথে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে ফাইন্যান্সিশিয়াল প্রডাক্টগুলো শুধু ব্যাংক না, ডাইভারসিফিকেশন দরকার। বন্ড মার্কেট ছেড়েছে কিন্তু ইন্টারেস্ট নাকি ১০ পার্সেন্ট। তাহলে বন্ড ছেড়ে কী হল? অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্টগুলো অ্যালাউ করতে হবে। রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্কটা শক্তিশালী করতে হবে।
শুধু ইন্টারেস্ট নয়, হিডেন চার্জগুলো ঠিক করতে হবে; কমাতে হবে। এত হিডেন চার্জ কেন? আপনার যে চুক্তিটা দেয় সেটার প্রিন্ট যেটা দেয় ছয় মাস কেন লাগবে পড়তে? এগুলো অস্বাভাবিক বিষয়। যখন লুণ্ঠনের সময় ছিল, উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো তখন করেছে। বাংলাদেশতো ওই অধ্যায়টা এড়াতে চাচ্ছে। আমরা লেসন নিয়ে ওই চ্যাপ্টারগুলো স্কিপ করে এগোতে চাচ্ছি। এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলছে। ২০১০ সালের ধসের পর নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। উল্টো দিন যতো যাচ্ছে পরিস্থিতি ততোই খরাপের দিকে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে?
শেখ ফজলে ফাহিম: ঠিকই বলেছেন, ব্যাংকিং খাতের মতো পুঁজিবাজারের অবস্থাও খারাপ। ব্যাংক ছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেটের কি উপায় আছে? উপায় নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটে যখন সমস্যা হল তখন পাঁচ হাজার কোটি টাকা এনগেইজ করা হল। তারপর চীনের শেনজেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার করা হল। এই সব কিছুর পর আমাদের আশা ছিল, বাজার ভালো হবে, স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তবে এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে, ব্যাংক ছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেটের কি কোনো উপায় আছে? উত্তর-নেই। আর সেটা যদি হয়, তাহলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা দূর না করে শেয়ার বাজার থেকে ভালো কিছু আশা করা উচিৎ হবে না বলে আমি মনে করি। ক্যাপিটাল মার্কেটের এই যে সমস্যা সেটা ব্যাংকিং সেক্টরের দুরাবস্থার কারণেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে গতি সঞ্চার হয়েছিল সেটা যেন একটু থমকে গেছে। রপ্তানিতে ধস নেমেছে, রাজস্ব আদায় কম। রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো নেতিবাচক। আপনার বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন কেমন?
শেখ ফজলে ফাহিম: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। তিন-চার মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। আর এক্সপোর্ট গ্রোথ যে নিচের দিকে যাচ্ছে, সেটা কিন্তু একদিনে যায়নি। ইউরোপিয়ান ইকোনোমি স্লো ডাউনের ব্যাপার আছে এখানে। ওখানকার মানুষ এখন কম কেনাকাটা করছে। যেহেতু ইউরোপ আমাদের একটা বড় বাজার, সেহেতু ওখানে আমাদের রপ্তানি একটু ধাক্কা খেয়েছে।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে যে গ্লোবাল ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে ন্যাচারাল ফাইবার থেকে সিন্থেটিক ফাইবারের দিকে যাচ্ছে সবাই। ওটার ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের ক্ষেত্রে খুবই সামান্য অগ্রগতি হয়েছে। এটা আমি আরএমজির (তৈরি পোশাক) কথা বলছি। প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশনের প্রিপারেটরি যে কাজটা, সেখানে হয়ত আরও স্কোপ আছে ফোকাস এবং স্ট্রাটেজিক্যালি এগোনোর। সেটা স্বল্প মেয়াদে অ্যাবজর্ভ করে নিতে পারলেই ভালো হবে বলে আমি মনে করি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: অনেকে বলছেন আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল বাংলাদেশ পেতে পারে। আপনি কী মনে করেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: আমাদের এখানে চারশটা চাইনিজ কোম্পানি অপারেশনে আছে। তাদের একটা আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন আছে। নাম্বার অব বিজনেসেস আর কামিং। কোনো রকমের শিফট যদি একটা দেশ থেকে আরেকটা দেশে আসতে হয়, সেটা কিন্তু হঠাৎ করে চাইনিজ-ইউএস বাণিজ্য যুদ্ধ লাগার জন্য হবে না। সেটার পেছনে প্রিপারেটরি কিছু কাজ থাকে এবং প্রাইভেট সেক্টর থেকে কাজগুলো স্ট্রাকচারালি নেওয়া হয়, তাহলে সরকারের তরফ থেকে কিন্তু সব ধরনের দরজা খোলা। আলোচনা করলে অনেক কিছুই আমরা করতে পারছি। কিন্তু উই হ্যাভ টু জাস্টিফাই। এই বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের বড় ধরনের বেনিফিট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা বেসরকারি উদ্যোগে ইতোমধ্যে নানা তৎপরতা শুরু করে দিয়েছি। সরকারিভাবেও কাজ চলছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের আন্ডার সেক্রেটারি থাইল্যান্ডে ওদের একটা ইভেন্টে এসেছিল, একদিন ছিল। আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম। আলাপ হয়েছে।
নেক্সট ইয়ার আমরা আশা করছি, আমেরিকা থেকে বড় ধরনের ইনভেস্টমেন্ট ডেলিগেশন বাংলাদেশে আসবে। তখন বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের আলোচনা হবে। একইসঙ্গে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বিজনেস সামিট করতে যাচ্ছি। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও সেখানে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা থাকবেন। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
এছাড়া ডি-৮ মিনিস্ট্রিয়াল সামিট যখন হবে এফবিসিসিআই তখন ডি-৮ চেম্বার্স অব কমার্স নিয়ে একটা সামিট করবে। চায়নার সাউথ এশিয়া বিজনেস ফোরাম হতে যাচ্ছে সামনের বছর, সেটার চেয়ার আমরা। কুনমিংয়েও আমরা ‘বাংলাদেশ ফোকাসড’ নামের একটা সামিট করব।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল পেতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উদ্যোক্তারা অনেক আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের প্রবাহ খুবই ভালো। ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বেশি বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তারা। আরও বেশি রেমিটেন্স কীভাবে দেশে আসতে পারে?
আমাদের যারা বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে একেবারে এন্ট্রি লেভেল কাজ শুরু করছেন। কোনো ধরনের ট্রেনিং না নিয়ে যাওয়ার কারণেই এ কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে তাদের। যে সব দেশ থেকে শ্রমিকরা খুব মাইনর ট্রেনিং নিয়ে যাচ্ছে, কথার কথা তারা ৩০০ ডলার পাচ্ছে। সেখানে আমরা পাচ্ছি ১০০ ডলার। সে কারণেই দক্ষ জনশক্তি পাঠানো এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এই যে আমরা বড় আশা করে আমাদের বোনদের বিদেশে পাঠানো শুরু করলাম। এখন তারা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অনেকে দেশে ফিরে আসছেন। যদি আমরা একটু দক্ষ করে একটু ভালো কাজে তাদের পাঠাতাম, তাহলে কিন্তু তাদের কান্না আমাদের দেখতে হত না।
তবে এক্ষেত্রে বোনদের পাঠাচ্ছে অর্থাৎ যে সব এজেন্সি এদের পাঠাচ্ছে তারা কোথায় পাঠাচ্ছে; যারা নিচ্ছে তারা নিয়ে গিয়ে ঠিকমতো কাজ দিচ্ছে কি না সে বিষয়গুলো ভালোভাবে মনিটর করতে হবে। কোনো এজেন্সির কারণে নাজেহাল হলে, নির্যাতিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর আরেকটি বিষয় এখানে বলতে চাই, যে সব ভাই-বোনেরা কষ্ট করে রেমিটেন্স পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে তারা যেন বিমানবন্দরে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা কিন্তু বার বার বলেও কোনো কাজ হয়নি। আশা করছি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবার এ বিষয়ে সিরিয়াস পদক্ষেপ নেবে।
গত অর্থবছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ায় এবার ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমি মনে করি, আমরা যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে দক্ষ লোকজন পাঠাই, নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করি এবং আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি আরেকটু সদয় হই, তাহলে দুই-তিন বছরের মধ্যে রেমিটেন্স ৪০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: পেঁয়াজের দর কেজিতে আড়াইশ টাকায় উঠেছে। কয়েক দিন আগে লবণ নিয়ে সারা দেশে গুজব বয়ে গেছে। চালের দাম বাড়তির দিকে। পণ্যমূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদেরই বেশি দোষারোপ করা হয়। আপনি বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: এ কথা ঠিক যে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে অনেক সময় বেশি লাভে পণ্য বিক্রি করে। তবে এ সংখ্যা খুবই সীমিত। যৌক্তিক কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই যে পেঁয়াজের দাম নিয়ে এতো কথা হচ্ছে তার কিন্তু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পরই কিন্তু এই অবস্থা হয়েছে।
আমাদের এফবিসিসিআইয়ের যে মেম্বাররা আছেন নিত্য প্রয়োজনী জিনিস রিলেটেড, দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা নিজেরা আলোচনা করে একটা অবস্থানে গিয়েছি। আমরা মনে করি, পুরো ভ্যালু চেইন ম্যানেজমেন্টটা…মানে কী পণ্য লাগছে, কী আমদানি হচ্ছে, কে কত আনছে, সারা বছর এক লাখ লাগলে কে কত টন আনছে, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে কোন চ্যানেলে কতটা যাচ্ছে, আটটা ডিভিশনে আমার কোন প্রডাক্টটা কত যাচ্ছে এবং সেখান থেকে পাইকারি, সেখান থেকে খুচরাতে কত যাচ্ছে- এই জিনিসটা একটা সমন্বিতভাবে আন্তঃমন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই আমরাতো আছি, এরসঙ্গে যারা আমদানি করছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি।
আমরা মনে করছি, এই যে পাবলিক-প্রাইভেট স্টক টেকিং, এই যে আমার কত পেঁয়াজ আসছে কত চাল আসছে- এই জিসিটা আমরা সমন্বিতভাবে করি। ক্রাইসিস হলে ব্যবসায়ীদের ডেকে না এনে, তিন মাস পর কী আসবে, ছয় মাস পর কী আসবে- এই যে ফ্লোটা আছে সেটা মনিটর করা। তখন বাজারে অস্বাভাবিক বিষয় হবে না।
৫ টাকার জিনিস ১০৫ টাকা হলে সেটা মনিটর করার জন্য এটা বেস্ট অপশন। ভ্যালু চেইনের ফোরকাস্টটা অ্যাসেস করা, ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল ম্যানেজ করা এবং কোন পয়েন্টে কী যাচ্ছে, কোন বাজারে কী যাচ্ছে, সেটা অ্যাসেসমেন্ট রাখা- তাহলে রোজার মাসেও অস্বাভাবিক হবে না, উৎসবের সময়ও বাড়াবাড়ি করবে না। আর যে অভিজ্ঞতা আমাদের হচ্ছে সেটা হবে না।
যদি কোনো ব্যবসায়ী ভোক্তাদের জিম্মি করে এই ধরনের কাজ করে তাহলে আমাদের কাছেও আগে থেকে নলেজে থাকবে, কোন জায়গা থেকে হচ্ছে, রেগুলেটরি বডির কাছেও থাকবে। আমরা রেগুলেটরি বডি না। আমাদের কাছে অনেক সময় জিজ্ঞেস করে খাবারে ভেজাল নিয়ে আমরা কী করছি? আমরা রেগুলেটরি বডি না। আমরা সচেতনতা বাড়াতে পারি, এর বেশি কিছু নয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: ব্যবসায়ীদের সংগঠনের একজন নেতা হিসেবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কী কী সমস্যা আপনার চোখে পড়ে?
শেখ ফজলে ফাহিম: সরকার থেকে আমাদের যে সহযোগিতা দেওয়া হয় সেগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। পলিটিক্যাল লিডারশিপ এবং আমলাদের কাছ থেকেও আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু এগুলো তৃণমূলে যখন এক্সিকিউশনে যাচ্ছে, ছোট ছোট জিনিসগুলো যেমন- পোর্টে সময় লাগছে, ২ শতাংশ বেশি আছে বলে নিজেকে চোর ঘোষণা করতে হবে, পথে চাঁদা দিতে হবে- এই বিষয়গুলো যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি অ্যাড্রেস না করবেন ছোট ছোট সমস্যাগুলো বেড়ে অনেক বড় হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা নেই। নেই জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ। বিদ্যুৎ-গ্যাস সমস্যারও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না কেন?
শেখ ফজলে ফাহিম: বিনিয়োগ বাড়েনি এ কথা ঠিক নয়। সরকারি বিনিয়োগ বেশ ভালোই বাড়ছে। তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ খুব একটা বাড়েনি। এক্ষেত্রে সেই পুরনো কথাই আবার বলতে হয়, বিশৃঙ্খল ব্যাংকিং খাত, ১৪-১৫ শতাংশ সুদ এবং মন্দা শেয়ার বাজার দিয়ে খুব বেশি বিনিয়োগ আশা করা ঠিক হবে না।
এছাড়া আমি মনে করি, বিনিয়োগের যে ইনস্ট্রুমেন্টগুলো সেগুলো ডাইভারসিফাই করা উচিত। মনে করেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড অথবা রিয়েল এস্টেট বন্ড- এসব ইনস্ট্রুমেন্ট অফার করা উচিত। উদাহরণ দিয়ে বলি, এই খাত ৩ পার্সেন্ট পাবে, ওই খাত ২ পার্সেন্ট পাবে- এমন অপশন থাকা উচিত।
বড় বড় গ্রুপ আছে যাদের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। তারাও এ ধরণের ইনস্ট্রুমেন্টে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী এটা হয়। এই সব কিছুর পেছনে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্ক ও মেকানিজম হ্যাজ টু বি ওয়ার্ল্ড ক্লাস। না হলে মানুষের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
আর আরেকটি বিষয়, যে কোনো সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে- বিচার বিশ্লেষণ করে নিতে হবে। সেটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকই হোক আর সরকারই হোক। এই যে কয়েক দিন আগে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে একটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার বাদ দিল। এভাবে এডহক কাজ করলে তো হবে না।