প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই শিল্প সেবাকেন্দ্রের উদ্বোধন করে বেজাকে তার অংশীদারদের আস্থা অর্জনে জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত ১৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১০৭টি সেবা এই সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বেজা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও সড়কে বেজার প্রধান কার্যালয়ে এই সার্ভিস সেন্টার হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, জাইকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সালমান রহমান বেজা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আইন কিংবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই যথেষ্ট নয়; বরং মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে তাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে। সেবা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।”
এর আগে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন যুগে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু হলেও তার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।
সালমান রহমান বলেন, “এক সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণাটি নিয়ে বেশ হাসাহাসি হত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরিকল্পনার সমালোচনা হত। অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে প্রধানমন্ত্রী কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে অনুমোদন দিয়েছিলেন, তার সমালোচনায় নেমে পড়েছিলেন নামিদামি অর্থনীতিবিদসহ আরও অনেকে। কিন্তু এগুলোর সবই এখন বাস্তবতা। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও দক্ষতার প্রতি সাধারণ মানুষের মাঝে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে।”
তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, তার খসড়া পরিকল্পনা বিরোধী দলে থাকতেই শেখ হাসিনা করে রেখেছিলেন।
বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়। এসব অনুমোদন গ্রহণে বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর সময় পার হয়ে যায়; এক সময় তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন।
এসব সমস্যার সমাধানে ২০১৮ সালে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন’ পাস করা হয়। এ আইনের আওতায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) বিধিমালা, ২০১৮ জারি করা হয়েছে।
এর ফলে সর্বোচ্চ একশ দিনের মধ্যেই সব ধরনের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব অনুমোদন নিশ্চিত করা যাবে বলে আশ্বস্ত করছে বেজা।
শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, জমি নিবন্ধন, নামজারি, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ, টেলিফোন-ইন্টারনেট সংযোগ, বিস্ফোরক লাইসেন্স, বয়লার সার্টিফিকেটসহ ২৭টি ক্যাটাগরির ১২৫ টি সেবা এক জায়গায় পাওয়া যাবে। তবে বর্তমানে চালু করা হয়েছে ১০৭টি সেবা।
এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল যারা শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে আসবে তাদের জন্য দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা করা। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালুর মাধ্যমে বেজা সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছে।
মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, ওএসএসসি চালুর মাধ্যমে যেই সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা ধরে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও অনেক দায় দায়িত্ব রয়েছে সেবাকে কাজে লাগানোর।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। আজকে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যেই জাপানো সুমিতোমু, চায়না হারবার, ভারতের আদানিসহ বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বেজার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।”