আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়াবে বলেও আশাবাদী এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ব্লকচেইন’ প্রযুক্তি নিয়ে এক কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “গত দশ বছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।”
পদ্মাসেতু চালু হলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৩০তম অর্থনীতির দেশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হবে’।
“২০৩০ সালের পর দেশে টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁজলেও দরিদ্র মানুষ পাওয়া যাবে না। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর সেরা ২০ অর্থনীতির মধ্যে ঢুকে পড়বে।”
দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আয়োজনে ‘হার্নেস ব্লকচেইন টেকনোলজি ফর বাংলাদেশ’ নিয়ে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী।
এই অনুষ্ঠানে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন পারকাশও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্ববাসীর কাছে ‘রোল মডেল’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশেও ব্লকচেইন প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এখন সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
“এই প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথাগত চাকরির সুযোগ সুবিধা বিলুপ্ত হওয়ার পাশাপাশি নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই আমাদের জনমিতিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে প্রযুক্তি ভিত্তিতে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়ে এই শিল্প বিপ্লবের সুযোগ নিতে হবে। কারণ চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অবিশ্বাস্য গতিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর সুবিধা নিতে হলে দ্রুত উন্নতি করতে হবে।”
এর জন্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই- ইলাহী চৌধুরী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র সুবিধা নিয়ে ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা বলেন।
“যাতে সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ ও দ্রুত এবং অধিক টেকসই প্রক্রিয়া নিশ্চিত হয়।”
তথ্য সংরক্ষণের একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি (এএফপি) হল ব্লকচেইন। এ পদ্ধতিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি চেইন আকারে সংরক্ষণ করা হয়। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা যেতে পারে। ব্লকচেইন প্রতিটি একক লেনদেনের যাচাইযোগ্য রেকর্ড নিয়ে গঠিত হয়। কোনো তথ্য একবার লেজারে গেলে তা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং কখনও মুছে ফেলা যায় না।
“অথচ তার কী দূরদর্শিতা- ডিজিটাল বাংলাদেশই আজ বাস্তবতা এবং মানুষ এটা গ্রহণ করেছে।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন পারকাশ বলেন, “বাংলাদেশ এখন জনমিতিক সুবিধা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) গ্রহণের যুগে প্রবেশ করেছে। এ সুবিধা নেওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগ ব্লকচেইন প্রযুক্তির জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করা।”
এডিবি প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লাখ তরুণ শ্রম বাজারে যুক্ত হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক তরুণকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে যুক্ত করতে পারলে অর্থনীতির সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব।
“বিশেষ করে ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হলে এদেশের সকল কর্মকাণ্ড ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল লেনদেনে স্বচ্ছতা চলে আসবে।”
এই তথ্য তুলে ধরে মনমোহন পারকাশ বলেন, “অথচ এই বিপুল সংখ্যক লোক প্রযুক্তি ও ব্লকচেইনভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি হলে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার দেশে পাঠানো সম্ভব ছিল।”
তিনি বলেন, দেশে সব ধরনের লেনদেন ব্লকচেইনের আওতায় নিয়ে আসা গেলে পুরো লেনদেনও কর্মকাণ্ডের প্রতিটি স্তরে সুসাশন, স্বচ্ছতার পাশাপাশি পরিচালন খরচও কমে আসবে। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবা খাতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দুর্নীতি ছাড়াই মানুষ সেবা পাবে।