‘বেপরোয়া চালকরা ক্যান্টনমেন্টে কেন সোজা, আর্থিক খাতেও তা করতে হবে’

ব্যাংকের অর্থ লুটপাট ঠেকাতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 11:23 AM
Updated : 23 April 2019, 11:23 AM

এ প্রসঙ্গে ঢাকার বেপরোয়া যান চালকদের সেনানিবাসের ভেতরে গতিসীমা ও নির্দিষ্ট লেন মেনে গাড়ি চালানোকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক সেমিনারে একথা বলেন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তা।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “আপনারা যদি সিঙ্গাপুরের কথা চিন্তা করেন সেখানে দেখবেন অপরাধের মাত্রা অত্যন্ত কম, কারণ কী? এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আপনি সিঙ্গাপুরে গেলে দেখবেন তাদের প্রায় প্রতিটি স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো খারাপ কাজ করেন, সেটা সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হবে এবং আপনি ধরা খাবেন।

“আর সিঙ্গাপুরে অন্য শাস্তি হওয়ার আগে বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা আছে। আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি, যদি কোনো কিছুতে সঠিক মনিটরিং রাখা যায় এবং আইন অনুযায়ী যে কোনো অপরাধের দ্রুত সঠিক বিচার করা যায় তাহলে সেই সমস্যা বা অপরাধ কমে আসবে এবং কমে আসতে বাধ্য।”

বাংলাদেশেও আইনের যথাযথ প্রয়োগে কাজ হওয়ার বিষয়টি বোঝাতে সোনালী ব্যাংকের এমডি বলেন, “আমরা জানি, আমাদের দেশের গাড়ির চালকরা আইন অমান্য করেন, খারাপভাবে গাড়ি চালান, এক্সিডেন্ট করেন। অথচ তারাই যখন জাহাঙ্গীর গেইট দিয়ে ঢোকেন অর্থাৎ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ঢোকেন তখন তারা দেখবেন কী সুন্দর যেখানে ২০ কিলো লেখা সেখানে ২০ কিলো যেখানে ৪০ কিলো লেখা সেখানে ৪০ কিলো প্রত্যেকটা দাগ সব কিছু মেনে চলেন, এর কারণ কী? এর কারণ তারা জানেন।

“যদি এখানে আইনের ব্যত্যয় হয় তাহলে তার বিচার হবে। আমাদের অবশ্যই অপরাধের দ্রুত বিচার আইন অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

ঋণ সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে আদালত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জায়গায় তিন-চারটা জেলা বা উপজেলা নিয়ে আদালত গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

“আমাদের মূল কথা, আমাদের আইন অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। আমাদের আইন খুব ভালো আছে কিন্তু আমাদের সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে- এটার কোনো ধরনের কোনো বিকল্প নেই।”

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।

প্রবন্ধে বলা হয়, প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার মামলা আদালতে আটকে আছে। মামলাগুলোর সমাধান হলে ব্যাংক টাকা পেত, ব্যাংকগুলো ভালো থাকতে পারত।

যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হয়েছেন তাদের বড় ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক প্রশান্ত।

তিনি বলেন, ঋণগ্রহীতা যে সম্পদ ব্যাংকের কাছে জমা দিয়ে ঋণ গ্রহণ করেন ঋণ খেলাপি হলে সেই সম্পদ ব্যাংক বিক্রি করার মানুষ খুঁজে পায় না।

এর সমাধান হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংক যেন ওই সম্পদের মালিক হতে পারে সেই ব্যবস্থা করার কথা পরামর্শ দেন তিনি।

গবেষণা প্রবন্ধে ব্যাংক খাতের ১২টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে, একজন ঋণ গ্রহীতা মোট কত টাকা ঋণ নিয়েছেন সেই তথ্য ব্যাংকগুলো জানতে পারে না, ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যারা বন্ধক সম্পত্তির মূল্যায়ন করেন তাদের জবাবদিহির অভাব, ব্যাংকের আইনজীবীদের জবাবদিহির অভাব, আর্থিক ও ব্যবসায়িক তথ্যের অসম্পূর্ণতা, নতুন ব্যবসায় ঋণ না দেওয়া, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় একজন গ্রাহককে অনেক ব্যাংক মিলে ঋণ দেওয়া এবং সুদ মওকুফ করে দেওয়া।

সুদ মওকুফের নেতিবাচক দিক তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, যারা খারাপ ঋণগ্রহীতা অর্থাৎ যারা টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দেন না তাদের ঋণের সুদ যদি মওকুফ করে দেওয়া হয় তাহলে সেটা যারা সঠিকভাবে ঋণ নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন তাদেরকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে ঋণের সুদ মওকুফ করার বিষয়টি খুবই চিন্তা ভাবনা করে করা উচিত।

অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার বলেন, ২০১৮ সালে কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কমে গেছে। এতে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থার উত্তরণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেমিনারে যোগ দিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বিআইবিএম মিলনায়তনে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিআইবিএমের শিক্ষক ও গবেষকরা।