বড় ঋণ ও এলসির জন্য গ্রাহককে ‘পুরোপুরি জানতে হবে’

ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার মধ্যে বড় কোনো ঋণ বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আব্দুর রহিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2019, 05:03 PM
Updated : 20 March 2019, 05:03 PM

বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় তিনি এই পরামর্শ দেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। অর্থপাচারের ঘটনাও ঘটছে, রপ্তানির নামে ৯১৯ কোটি বিদেশে পাচারের অভিযোগে মাস দুয়েক আগে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে কর্মশালায় ব্যাংকারদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “ব্যবসায়ীরা পণ্য মূল্য যাতে বেশি দেখাতে না পারে সেজন্য ব্যাংকারদের সতর্ক থাকতে হবে। একটি ডেটাবেজ করতে পারলে কোনো ব্যবসায়ী এ ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ পাবে না।”

ব্যাংকাররা সতর্ক থাকলে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি।

তাদের আলোচনার পর ব্যাংকারদের পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম বলেন, “উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। এজন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কোথায় সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

“তবে ব্যাংকারদের বড় ঋণ এবং বড় এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। গ্রাহক সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে অর্থায়ন করা ঠিক নয়।”

কর্মশালায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন নিয়ে বিআইবিএমের একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আধিপত্য আরও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয় আসে ৭১ শতাংশ। সেই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছিল ১৮ শতাংশ। বাকিটা বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে হয়।

২০১৮ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ শতাংশ। প্রায় ১৯ শতাংশ বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৭ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

এর আগে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮ সালে নতুন গাইডলাইন করেছে।”

মনিরুজ্জামান বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন গাইডলাইন আরও কার্যকরী করতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইনভিত্তিক রিপোটিং ও নজরদারি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ঠেকাতে এবং ডেটা সঠিকভাবে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিআইবিএমের চেয়ার অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বরকত-এ-খোদা বলেন, “ব্যাংকিং খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রপ্তানির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। এর সঙ্গে ব্যাংকের অর্থায়ন জড়িত। সুতরাং ব্যাংকর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ জোরারোপ করতে হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট অফিস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিলেট অফিসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তারিকুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সৈয়দ তারিকুজ্জামান বলেন, “বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেমন বেড়েছে, একে ঘিরে জটিলতা এবং আর্থিক অপরাধও বাড়ছে, যা এখন ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যাংক কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।”

এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কাস্টমস ভ্যালুশন অ্যান্ড ইন্টারনাল অডিট কমিশনারেটের কমিশনার মঈনুল খান বলেন, “রাজস্ব বোর্ড আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সব বিষয়ে সর্তক। এখন কিছু ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন আপডেট করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”