রপ্তানি আয়ে সুবাতাস

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সুবাতাস বইছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 05:35 PM
Updated : 6 Nov 2018, 05:35 PM

গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে কয়েক দিন শেষ হওয়া অক্টোবরে ৩০ শতাংশের বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।এই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশের মতো।

আর চার মাসের হিসাবে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে আয় বেড়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ।

মূলত: তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর ভর করেই এই উল্লম্ফন ঘটছে মন্তব্য করে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “আমাদের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে। আমরা এখন বেশি দামের পোশাকও রপ্তানি করছি। নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছি আমরা।জাতীয় নির্বাচনের আগেও দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।”

“সার্বিকভাবে সব কিছুই আমাদের অনুকূলে।সে কারণেই বাড়ছে রপ্তানি আয়।”

অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শোনান ফারুক হাসান।

মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ১৮ লাখ  (১৩.৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

গত বছরের এই চার মাসে আয় হয়েছিল ১  হাজার ১৫০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

অক্টোবরে ৩৭১ কোটি ১২ লাখ ডলার রপ্তানি আয় বাংলাদেশে এসেছে।

এই মাসে লক্ষ্য ধরা ছিল ২৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের অক্টোবরে আয় হয়েছিল ২৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট (মাসভিত্তিক) আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশের বেশি।

অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছে এখাত।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৫৮৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৪৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশের মতো। কিন্তু দ্বিতীয় মাস অগাস্টেই তা হোঁচট খায়। ওই মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে আয় কমে ১২ শতাংশ।

দেশের রপ্তানি আয়ের ওপর বরাবরই তৈরি পোশাক পণ্যের বড় ধরনের প্রভাব থাকে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে তাদের কারখানার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি রপ্তানি আয় বাড়াতে অবদান রেখেছে বলে মনে করেন পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থবছরের শুরুটা খুব ভালো হয়েছিল। কোরবানির ঈদের কারণে কয়েকদিন কারখানা এবং রপ্তানি কার‌্যক্রম বন্ধ থাকায় অগাস্ট মাসে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। সে ধাক্কা আমরা সামলে নিয়েছি। এখন প্রতি মাসেই রপ্তানি আয় বাড়ছে।”

অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে আয় বাড়বে আশা করে তিনি বলেন, “কারখানাগুলোর উন্নয়নে পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।”

এ কারণেই বিদেশি ক্রেতাদের আস্থার সঙ্গে ক্রয়াদেশও বেড়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সহসভাপতি।

“খুশির খবর হচ্ছে আমরা এখন অনেক বেশি দামের পোশাকও রপ্তানি করছি।আমরা ক্রেতাদের পছন্দ এবং ডিজাইনের পণ্য দিতে পারছি। আমাদের প্রতি তাদের আস্থা বাড়ছে।”

তবে ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক দরপতন করায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-অক্টোবর সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।

তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয় ১৯ শতাংশ কমেছে। এ খাতে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

একইভাবে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি আয়ও কমেছে। এ খাতে আয় হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।

সার্বিক রপ্তানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বাড়লেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছর ওই প্রবৃদ্ধি হয়। মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৯ বিলিয়ন (তিন হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

এবার দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত থেকে ৩২ দশমিক ৬৯  বিলিয়ন ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।