প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৫%, পূর্বাভাস এডিবির

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যহত থাকায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।

অর্থনীতি বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2018, 07:05 AM
Updated : 26 Sept 2018, 03:54 PM

বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল হকিকত নিয়ে প্রকাশিত এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৮ তে এই প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবির ঢাকা অফিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সন চ্যাং হং বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

“এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি পেতে পারে বলে আমরা মনে করছি।”

গত দুই অর্থবছরে ৭ শতাংশ ছাড়ানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পর চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ সরকার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে।

প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রথমবারের মত ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে।

গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ ডলারে। আর জিডিপির আকার ২৭৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ; আগের বছরে যা ৩ শতাংশ ছিল। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। তবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে।

এই তিন খাতেই চলতি অর্থবছর ভালো প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রতিবেদনে প্রত্যাশা করা হয়েছে।

ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার এ অর্থবছর বাড়বে এবং সরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রাখবে বলে এডিবি মনে করছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধীরগতির আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশের রপ্তানি এবং রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ও কিছুটা কমবে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সেবা ও শিল্পখাত বড় অবদান রাখবে বলে প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়।

সন চ্যাং হং বলেন, ২০১৮ সালে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পরে। সেখানে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভালো’।

ভবিষ্যতে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী হলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করছে এডিবে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদুতের মূল্য বৃদ্ধি, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ; আগের বছরে যা ১ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে এডিবি মনে করছে।

গত অর্থবছরে আমদানি খাতে ব্যয় ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ২ শতাংশে উঠেছে। চলতি অর্থবছরে তা কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

এডিবি বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরদের টাকা পাঠানোর উৎসাহিত করার কারণে রেমিটেন্সে এই প্রবৃদ্ধি।

আগারগাঁওয়ে এডিবি অফিসে এ সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশও উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করছেন।