অনুমোদন পেল শত বছরের ‘ডেল্টা প্ল্যান’

বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2018, 02:32 PM
Updated : 4 Sept 2018, 02:32 PM

‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে বেশি পরিচিত শতবছরের এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৯৭৮ বিলিয়ন টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ মহা-পরিকল্পনায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম পর্যায়ে ছয়টি ‘হটস্পট’ ঠিক করে এই ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ৬৫টি প্রকল্প ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং গবেষণা সংক্রান্ত।

“এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। এত লম্বা সময়ের পরিকল্পনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে নেওয়া কাজগুলোর মধ্যে পদ্মার ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ প্রায় সবগুলোই বড় প্রকল্প। ফলে এসব প্রকল্পের সব কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ নাও হতে পারে।

“২১০০ সাল পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন চলতে থাকবে। এসব প্রকল্পের জন্য নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ হবে।”

ছয়টি ‘হটস্পট’-এর ব্যাখ্যায় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে ছয় ধরনের জায়গাকে বাংলাদেশ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, সেগুলোকেই ‘হটস্পট’ বলা হচ্ছে। 

এগুলো হল- উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকা, পার্বত্য অঞ্চল এবং নগর এলাকা।

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বরেন্দ্র ও খরা প্রবণ অঞ্চলের মূল সমস্যা হল পানির প্রাপ্যতা। এসব এলাকায় এখন পানির স্তর ভূপৃষ্ঠের ৭০ থেকে ৮০ হাজারে ফুট নিচে চলে গেছে। ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় সেসব এলাকায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে চাষাবাদসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আবার হাওড় অঞ্চলে স্যানিটেশন, সুপেয় পানির দুস্প্রাপ্যতা এবং পানি সরবরাহ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেখানে খরস্রোতা নদীতে ড্রেজিং করে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উদ্যোগ নেবে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, “এ পরিকল্পনার আওতায় ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং লবণাক্ততা রোধেও কাজ করা হবে। আমাদের কিছু এলাকার ২৬ শতাংশ ইতোমধ্যে লবণাক্ত হয়ে গেছে। এসব সমস্যা মোকাবিলা করার জন্যই এ পরিকল্পনা।”

তিনি জানান, ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তাবয়নের জন্য আরেকটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে। ওই প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় বাংলাদেশের উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার রূপরেখা থাকবে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডস ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে ছয় হাজার স্কয়ার কিলোমিটার নতুন ভুমি পেয়েছে। তাদের সহযোগিতাতেই বাংলাদেশ এ পরিকল্পনা নিয়েছে।

“পানি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই পানিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে কৃষিতে আমরা পিছিয়ে থাকব না। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারব।”

ডেল্টা প্ল্যানে বলা হয়েছে, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবছর জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আড়াই শতাংশের মত অর্থের প্রয়োজন হবে। আর ২০৩১ সাল নাগাদ প্রতিবছর বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে ২৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

পরিকল্পনার ধারণা অনুযায়ী, দেশজ আয়ের মোট চাহিদার আড়াই শতাংশের মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অর্থায়ন বেসরকারি খাত থেকে এবং ২ শতাংশ সরকারি খাত থেকে যোগান দিতে হবে।

ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বেশিরভাগ সরকারি অর্থায়ন বন্যা থেকে রক্ষা, নদী ভাঙন, নিয়ন্ত্রণ, নদী শাসন, এবং নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ নদী ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সরকার তিন বছর আগে প্রায় ১০০ বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করে। নেদারল্যান্ডস সরকার এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য বাংলাদেশকে ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।