লেনদেন ভারসাম্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি

আমদানির চাপে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছে বাংলাদেশ।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2018, 04:52 PM
Updated : 13 August 2018, 04:52 PM

ঘাটতির এই পরিমাণ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৭ গুণ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে লেনদেন ভারসাম্যে এত বড় ঘাটতি আগে কখনো হয়নি।

দেড় মাস আগে অর্থবছর শেষ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট)  হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে সোমবার।

তাতে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭৮ কোটি ডলারে।

তবে সরকারের আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত থাকায় এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মত কিছু দেখছেন না গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের লেনদেন ভারসাম্যে ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ।

 

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ (৫৪.৪৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এর আগে কখনই এক অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে এতো বড় ঘাটতি হয়নি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৪৭কোটি ২০ লাখ ডলার ছিল।

তথ্য পর্যালোচনায়  দেখা যায়, গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।আর রপ্তানি আয় বেড়েছিল ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা বাণিজ্যেও এবার ঘাটতি বেড়েছে। গত অর্থবছরে সেবা বাণিজ্যে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৩২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার; ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই হিসাবে ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

এবার বিদেশি ঋণ-সহায়তা ছাড়ের পরিমাণ বাড়ায় আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে যেখানে ৪২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, গত অর্থবছরে তা বেড়ে ৯০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ৭১২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা এসেছে বাংলাদেশে।এর মধ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাবদ এসেছে ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি।আগের অর্থবছরে মোট ঋণ-সহায়তার পরিমাণ ছিল ২১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল, গত অর্থবছরে তা কমে ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়েছে।