এক বছরে বন্ধ হয়েছে ১৬ লাখ ব্যাংক একাউন্ট

এক বছরে ১৬ লাখ ব্যাংক হিসাব বন্ধ হওয়ার তথ্য তুলে ধরে বিআইবিএম বলছে, এটা ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির প্রমাণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2018, 09:23 AM
Updated : 31 May 2018, 03:15 PM

ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে হিসাব বন্ধের এই চিত্র তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১৭ সালে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৮১টি ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে, যা দেশের মোট ব্যাংক হিসাবের সাড়ে ১২ শতাংশ।

এর আগে ২০১৪ সালে মোট গ্রাহকের ৮ দশমিক ৬০  শতাংশ অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দিয়েছিল বলে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়।

২০১৫ সালে  এ ধরনের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়ে ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়ায়। পরের বছর তাও ছাড়িয়ে গেল।

‘সাসটেইনেবিলিটি ইন সার্ভিস কোয়ালিটি অ্যান্ড কাস্টমার্স কনফর্মিটি : ড্রাইভার্স অব কাস্টমার্স লয়ালিটি টু ব্যাংকস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা দিন দিন কমে যাওয়ার দিকটি নিয়ে আলোচনা করে এই থেকে উত্তরণে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “প্রতিবছর গ্রাহকরা ব্যাংক হিসাব বন্ধ করলেও ৫৬ শতাংশ ব্যাংকে এ বিষয়ে গ্রাহকদের কোনো সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়নি। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব ব্যাংক হিসাবধারীর কোনো ট্র্যাক রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হয় না।”

গ্রাহকদের আস্থা চলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেন ড. তাজুল।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ- খোদা বলেন, অর্থনীতিতে গ্রাহক সন্তুষ্টি সাফল্য অর্জনের অন্যতম নিয়ামক। ব্যাংকিং খাতেও ভালো পণ্যের সঙ্গে ভালো সেবা প্রদান করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে গ্রাহকদের সারি (ফাইল ছবি)

গ্রাহকদের অভিযোগ, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “ব্যাংকিং খাতে কর্মীদের কিছু সৌজন্য শেখাতে হবে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণেই।”

বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, “গ্রাহকদের সন্তুষ্টি এবং দ্রুত সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।”

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, গ্রাহকদের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। তা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “যে ব্যাংকের কৌশল যত উন্নত তারা বেশি মুনাফা করে। গ্রাহককে উত্তম সেবা দিয়েই কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে।”