নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে তদারকিতে জোর প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর

দেশের সব মানুষকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পোল্ট্রি ও হ্যাচারিসহ সব ধরনের খাদ্যের উৎপাদন পর্যায়ে তদারকি জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2018, 07:50 PM
Updated : 23 April 2018, 12:07 PM

তিনি বলেছেন, “আমাদের খাদ্য উৎপাদন পর্যায়ে প্রথমে ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে। এরপর ভয় না পেয়ে ওই ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।”

উপজেলা পর্যায়ে একজন পশু চিকিৎসক ও একজন কর্মকর্তা থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাত্র দুজনকে দিয়ে এই তদারকি সম্ভব নয়। তাই জনবল বাড়াতে হবে।

ঢাকার রিজেন্সি হোটেলে রোববার ‘ফুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেফটি ইন কমার্শিয়াল পোল্ট্রি প্রোডাকশন’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য যে কোনো মূল্যে খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে হবে।

“আমাদের দেশে মুরগির মাংসের সিংহভাগ এবং ডিমের প্রায় পুরোটাই আসে পোল্ট্রি থেকে। কোনো খামারি অবৈধভাবে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার (এজিপি) খাওয়াচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

মুরগির ওজন বাড়ানোর জন্য দেশে উৎপাদিত অবৈধ ক্ষতিকর কিছু খাওয়ানো হচ্ছে কি না, তাও তদারকির কথা বলেন তিনি।

“এজন্য ইচ্ছা করলেই তথ্য নেওয়া সম্ভব। যেমন কোনো ফার্মের পাশে গিয়ে জানতে চাইলেই অমুকের ফার্মে কোন খাদ্য খাওয়াচ্ছে তা জানা যায়।”

অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা পোল্ট্রি, পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বেলজিয়াম, জার্মানি ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফুড সেফটি’র সভাপতি ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। 

ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়ছে অথচ কমছে আবাদি জমি। তাই মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শুধু খাদ্যের সংস্থান করাটাই যথেষ্ট নয় বরং তারচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা।

“তবে অত্যন্ত গর্বের বিষয়টি হচ্ছে, বর্তমানে বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিক গ্রোথ প্রোমোটার (এজিপি) মুক্ত পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বের সর্বাধিক পোল্ট্রি উৎপাদনকারি দেশ ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এজিপির ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলেও বাংলাদেশ সরকার তা পেরেছে।”

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. জসিমউদ্দিন বলেন, “সেইফ ফুড নিশ্চিত করতে হলে সেইফ ফিডের নিশ্চয়তা দিতে হবে। ফিড অ্যাক্ট সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না।”

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. আইনুল হক বলেন, প্রাণিজ আমিষকে নিরাপদ রাখতে ফুড সেফটি অথরিটি, ইন্সটিটিউট অব পাললিক হেলথ এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) সাথে যৌথভাবে কাজ করছে সরকার। খামারিদের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচেতনতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

খালেদ জানান, পোল্ট্রি খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে মোট প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরামর্শক শাহ মুনির বলেন,  খামারিরা মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির হাতে জিম্মি হয়ে আছে, তাই উৎপান ও বিপণনের মাঝে সংযোগ স্থাপন জরুরি।

ওয়াপসা-বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বলেন, দু’দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন এবং খামারে জীবাণুমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে যে সব সুপারিশ এসেছে, তা শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়ক হবে।