আকুর রেকর্ড বিল, রিজার্ভে টান

লাগামহীন আমদানিতে চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ; অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল এবার ১৫৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2018, 05:49 AM
Updated : 4 March 2018, 05:49 AM

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে তিন হাজার ৩৩৬ কোটি (৩৩.৩৬ বিলিয়ন) ডলার ছিল। সোম অথবা মঙ্গলবার আকুর আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আকুর সদস্যভূক্ত নয়টি দেশ থেকে যে সব পণ্য আমদানি করা হয় তার বিল একসঙ্গে আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করে বাংলাদেশ। দুই মাস পর পর এই বিল শোধ করতে হয়।

আমদানি বাড়ায় এবার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে আকুর বিল হয়েছে ১৫৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর আগে কখনই বাংলাদেশের আমদানি বিল এত বেশি হয়নি।

গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মেয়াদে ১১৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদে শোধ করা হয় ১১৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিল।

আমদানি বিল এই হারে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ চাপের মুখে পড়বে মন্তব্য করে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি মাসেই আমদানি ও এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয় ২৯ শতাংশ বেড়েছে।

“আমি হিসাব করে দেখেছি, চলতি অর্থ বছর শেষে আমদানি ব্যয় ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।”

আহসান মনসুর বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির যে উল্লম্ফন, সেটা মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অন্যান্য বড় প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির কারণে। এছাড়া চাল, জ্বালানি তেল, ক্যাপিটাল মেশিনারি এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়ছে।”

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমদানি হয়েছে ২৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

এই সময়ে খাদ্য (চাল ও গম) আমদানি বেড়েছে ২১২ শতাংশ। ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। আর শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলছেন, প্রবৃদ্ধি উর্ধ্বমুখী থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, আমদানি বাড়ছে।

“বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ৭ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সামনের দিনগুলোতে সার্বিক রিজার্ভ পরিস্থিতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অনুকূল থাকবে বলেই আশা করছি।”

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ৩৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।