ডিসেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ২২% শতাংশ

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারার মধ্য দিয়েই শেষ হলো ২০১৭ সাল।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2017, 07:05 PM
Updated : 1 Jan 2018, 05:17 PM

বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।

আর চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহে যে নেতিবাচক ধারা ছিল সেটা এবার কেটে গেছে। আমরা আশা করছি অর্থবছর শেষে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৬৯৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের এই ছয় মাসের চেয়ে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও রেমিটেন্স কমেছিল। এবার সে খরা কেটে গেছে।”

তিনি বলেন, রেমিটেন্স বাড়াতে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সবের ইতিবাচক ফল এখন লক্ষ করা যাচ্ছে।

“তবে আমাদের সবার একটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আমাদের অনেক প্রবাসী বিভিন্ন দেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। তারা কিন্তু আর আগের মতো রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। একক মাসের হিসেবে এটা ছিল সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছিল। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিটেন্স আসে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। দ্বিতীয় মাস অগাস্টে আসে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।

অক্টোবর মাসে এসেছে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। নভেম্বর মাসে আসে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে।

এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে আসে ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলার, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রেমিটেন্সের উৎস দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য মাধ্যমে হুন্ডি প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধপথে প্রবাসীদের অর্থ কম আসছিল বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ধরে পড়তির দিকে থাকা রেমিটেন্স চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যায়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে ফের তা কমে যায়।

অক্টোবর, নভেম্বর এবং সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে তা ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।  বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।