ভোলার নতুন ক্ষেত্র থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন শুরু

ভোলার বোরহানউদ্দিনে রাষ্ট্রায়াত্ত কোম্পানি বাপেক্সের পাওয়া নতুন ক্ষেত্র ‘শাহবাজপুর ইস্ট-১’ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2017, 05:01 AM
Updated : 1 Nov 2017, 10:37 AM

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে ‘ড্রিল স্টেম টেস্ট’ এর মাধ্যমে নতুন ওই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়।

নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান শাহবাজপুরের বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগবি ইউনিয়নে।

সকালে উত্তোলন শুরুর সময় প্রায় পাঁচ হাজার পিএসআই গ্যাসের চাপ ছিল বলে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. হাসানুজ্জামান জানান।

এই ক্ষেত্রে ৭২০ বিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে বাপেক্সের কর্মকর্তাদের ধারণা। তবে দ্বীপজেলা ভোলা থেকে দেশের অন্য জায়গায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের অবকাঠামো নেই। 

বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালে উৎপাদন শুরুর পর প্রথমে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট (সারাদিনের হিসাব ধরে) হারে গ্যাস প্রবাহ পেলেও এখন ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে উঠছে।

গত ২৩ অক্টোবর নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ ভালো সুসংবদ।”

বাপেক্স কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন কূপে ৩৫৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খনন চালিয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৩৪০০ থেকে ৩৪৭০ মিটারের মধ্যে তিনটি স্তরে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে।

সেখানে একটি কূপ থেকেই গ্যাস উত্তোলন করা হবে, না কি আরও কূপ করা হবে জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তা নির্ভর করবে চাহিদা ও গ্যাসের সরবরাহের ওপর।

“এখানে প্রচুর গ্যাস রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেশে এত বড় গ্যাসের আধার পাওয়া যায়নি।”

ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ মে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। সেখানে থাকা আগের চারটি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। শাহবাজপুরে মোট ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে বাপেক্সের প্রকৌশলীদের ধারণা। 

রাষ্ট্রায়ত্ব তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রমানিত গ্যাসের মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সারা দেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের।

চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। স্থল, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে একাধিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলছে।     

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহককে গ্যাস দিতে হয়।

উৎপাদিত গ্যাসের ৪২ শতাংশ যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে; ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আর ১৭ শতাংশ গ্যাস শিল্প কারখানায়, ১১ শতাংশ আবাসিক সংযোগে, ৭ শতাংশ সার কারখানায় এবং ৬ শতাংশ গ্যাস যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।