দারিদ্র্যের হার নেমে ২৪.৩ শতাংশে: বিবিএস

বাংলাদেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2017, 06:14 PM
Updated : 18 Oct 2017, 04:20 AM

২০১৬ এর চালানো খানা আয়-ব্যয় জরিপে ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার ৬ শতাংশ কমে আসার এই তথ্য উঠে আসে।

মঙ্গলবার বিবিএস সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বিবিএসের সর্বশেষ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত এই খানা জরিপ চালায় বিবিএস; তার আগের জরিপটি চালানো হয়েছিল ২০১০ সালে।

সর্বশেষ জরিপের ফল বলছে, দেশের দারিদ্র্যহার এখন ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যহার ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শহরের দারিদ্র্যহার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০১০ সালের জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশ্ব ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি রাজশ্রী এস পারালকার দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, “গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের দরিদ্র্য মানুষ ৫০ ভাগ কমেছে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুস্তফা কামাল বলেন, “দারিদ্র্যের হার আগে যে হারে কমেছিল, এখন সেই গতিতে কমবে না। কারণ এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসছে।”

নিজেদের নানা উদ্যোগে দারিদ্র্য ঘোচাচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষ; গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাজে তেলকুপি গ্রামের এই ফুয়ারা বেগম স্বাবলম্বী হয়েছেন কেঁচো চাষের মাধ্যমে (ফাইল ছবি)

‘হাউজ হোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে ২০১৬’ প্রকল্পের পরিচালক দিপঙ্কর রায় নতুন জরিপের প্রাথমিক তথ্য উপস্থাপন করেন।

জরিপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে দিপঙ্কর বলেন, এটি ‘উন্নয়নের একটি অন্যতম দিক নির্দেশক’।

২০১৬ সালে খাদ্য বহির্ভূত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা ২০১০ সালে ছিল ৪৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশে খানা প্রতি মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকা। এটি গ্রামাঞ্চলে ১৩ হাজার ৩৫৩ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ২২ হাজার ৫৬৫ টাকা।

২০১০ সালে খানা প্রতি মাসিক আয় ছিল ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা।

এখন প্রতিটি খানার মাসিক ব্যয় ১৫ হাজার ৯১৫ টাকা। গ্রামাঞ্চলে ১৪ হাজার ১৫৬ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ১৯ হাজার ৬৯৭ টাকা। ২০১০ সালে খানা প্রতি মাসিক ব্যয় ছিল ১১ হাজার ২০০ টাকা।

অন্যান্য সূচক

>> সর্বশেষ জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পাকা বাড়ি; যা ২০১০ সালে ছিল ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ।

>> ২০১০ সালে  টিন ও কাঠের বাড়ি ছিল ৩৮ দশমিক ৪৬ ভাগ; ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৯ দশমিক ১২ ভাগ।

>> ২০১০ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে এমন পরিবার ছিল ৫৫ দশমিক ২৬ ভাগ। ২০১৬ সালে বিদ্যুতের এই হার ৭৫ দশমিক ৯২ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

>> ২০১০ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৫৭ দশমিক ৯ ভাগ; ২০১৬ সালে এই হার  বেড়ে হয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ ভাগ।

>> সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে উপকারভোগী ২০১০ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৬ ভাগ; ২০১৬ সালে তা ২৮ দশমিক ৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

>> ২০১০ সালে দেশে অক্ষম লোকের হার ছিল ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে।

>> ২০১০ সালে ৩২ শতাংশ মানুষ ছিল ঋণগ্রস্ত; ২০১৬ সালে এ হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশে।

কমেছে খাদ্যগ্রহণ

২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের মোট খাদ্য গ্রহণের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ২০১০ সালে দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল এক হাজার গ্রাম, যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ গ্রাম।

নতুন জরিপে চাল ও আটা গ্রহণের হার কমলেও ডাল, শাক-সবজি, মাংস ও ডিম খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।

২০১০ সালে চাল ও আটা গ্রহণের পরিমাণ ছিল দৈনিক ৪১৬ দশমিক ০১ গ্রাম ও ২৬ দশমিক ০৯ গ্রাম;  ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬৭ দশমিক ১৯ গ্রাম ও ১৯ দশমিক ৮৩ গ্রাম।

পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “দেশের মানুষের ভাত, আটা খাওয়ার পরিমাণ কমেছে, এটা ভালো খবর।”

২০১০ সালে দৈনিক ২ হাজার ৩১৮ কিলো ক্যালরি গ্রহণ করা হলেও ২০১৬ সালে গ্রহণ করা হচ্ছে ২ হাজার ২১০ কিলো ক্যালরি। প্রোটিন গ্রহণের হার ২০১০ সালে ছিল ৬৬ দশমিক ২৬ গ্রাম এবং ২০১৬ সালে কমে হয়েছে ৬৩ দশমিক ৮০ গ্রাম।