‘আমরা পারি’- সবক্ষেত্রে হোক: আনু মুহাম্মদ

পদ্মা সেতুর মতো দেশের অন্য সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আমরা পারি’ বক্তব্যের প্রতিফলন চাইছেন অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2017, 11:14 AM
Updated : 8 Oct 2017, 12:12 PM

“প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় বলছেন ‘আমরা যে পারি তা প্রমাণ হয়েছে’। সেটাই তো আমরা গত ১০/২০ বছর ধরে বলে আসছি। ‘আমরা পারি’ সেই কথাটা বঙ্গোপসাগরে গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্রে আপনার বলতে কী অসুবিধা?” বলেছেন তিনি।

রোববার রাজধানীর পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারি মহাপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

বাম দলগুলো সমর্থিত নাগরিক এই কমিটি খনিজ অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরতা কমিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষপাতি।

বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণকে দেশের সক্ষমতার প্রকাশ বলে আসছেন শেখ হাসিনা, তা ধরেই আনু মুহাম্মদের ওই বক্তব্য।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন যে, প্রয়োজনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি করতে হয় আমাদের দেশে জাতীয় সক্ষমতা বিকাশ করে সেটা আমরা দেখব। আপনি রাশিয়া ও ভারতের উপর ভর করে কেন করবেন?

“কেন বলতে পারেন না যে, আমাদের সক্ষমতা তৈরি হোক, তারপর আমরা করব। যেটা আমাদের সক্ষমতা নেই, নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যার উপর আমাদের কর্তৃত্ব নেই, সেটা কেন আমরা করতে যাব?”

শেখ হাসিনা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রমাণ করেছে ‘আমরা পারি’

“বাংলাদেশ কি অন্যের একটি আবর্জনার জায়গা হবে? পরিত্যক্ত কোনো নিউক্লিয়ার প্লান্টের জায়গা হবে, নাকি দেশের মানুষের কর্তৃত্বের জায়গা হবে? বাংলাদেশ কি চীন, ভারত, রাশিয়া, আমেরিকার খেলাধুলার জায়গা হবে? তাদের মুনাফার জায়গা হবে?”

“এসব জায়গাতে ‘আমরা পারি’ সে কথাটা আপনি বলেন। আমরা কীভাবে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে পারি সেটা বলেন,” বলেন আনু মুহাম্মদ।

গ্যাস-বিদ্যুতের উৎপাদন বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিলে তাতে দেশের মানুষের ‘কর্তৃত্ব হরণ করা’ হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আনু মুহাম্মদ।

বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে গত ২২ জুলাই সরকারকে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে একটি পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “সরকারের মহাপরিকল্পনার পথে অগ্রসর হলে বিদ্যুতের দাম এখন যা আছে, তা থেকে বাড়তেই থাকবে। আমরা যে মহাপরিকল্পনা দিয়েছি, তাতে বিদ্যুতের দাম কমবে। বিদ্যুৎ পরিবেশ ধ্বংসী হবে না, ঋণনির্ভর বিদ্যুৎ হবে না, বিদেশি কোম্পানিনির্ভর বিদ্যুৎ হবে না।

“প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই মনে করেন যে ‘হ্যাঁ, আমরাও পারি’, তাহলে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে উন্নয়নের গতিমুখ পরিবর্তন হবে।”

সরকার জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনা ও দাবি অগ্রাহ্য করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দিকে অগ্রসর হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন আনু মুহাম্মদ।

তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির আয়োজনে এই মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।