সোমবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনায় এই সুপারিশ জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান তাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ সংস্থার কর্মকর্তারা এই আলোচনায় ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের আপত্তির মধ্যে পিছু হটার পর এবার আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের কথা বলছে সরকার। এবার পিছু হটবেন না বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন।
ডিসিসিআই সভাপতি কাশেম বলেন, “খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ করারোপ করা হলে ক্ষুদ্র মাঝারি (এসএমই) ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।”
তিনি জানান, বেসরকারি খাতের ৭৫ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসএমই খাতের। দেশের ৭৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় এই খাত থেকে। শিল্পখাতের ৮০ শতাংশই এসএমই খাতভিত্তিক।
একজন বড় ব্যবসায়ীর সমান ১৫ শতাংশ হারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর উপরও কর ধার্য করা ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
“বরং কর কমিয়ে আনলে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরকারকে ভ্যাট দিতে আগ্রহী হবে। এতে সরকারও ব্যাপকভাবে লাভবান হবে,” বলেন তিনি।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর মালয়েশিয়ায় ৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ১০ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ৫ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ১২ শতাংশ ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কাশেম।
“তাদের সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের ভ্যাট আরোপ করা উচিৎ,” বলেন তিনি।
ডিসিসিআই নতুন বাজেটের জন্য আইকর আইন ও বিধি, আইকর সংক্রান্ত, আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক নীতি, আইন ও বিধি এবং আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত মোট ৩৮টি সুপারিশ করেছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত এবং ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ কর আরোপ।
করমুক্ত আয়সীমা নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করে ডিসিসিআই।
আবুল কাশেম শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে করের আওতার বাইরে রাখার প্রস্তাব করেন। এছাড়াও ব্রোকারজ কোম্পানির কর্পোরেট কর হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
আবাসন খাতে গতি সঞ্চারের জন্য নতুন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে উৎসে কর ও ভ্যাট হ্রাসের আহবান জানান তিনি।
কাশেম বলেন, “ভিয়েতনামের ১০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ কর দেয়। আমাদের কর জিডিপি অনুপাত সাড়ে ১৪ শতাংশে উন্নীত করতে হলে আরও ১৯ লাখ লোককে করের আওতায় আনতে হবে।”
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার, পরিচালক আসিফ এ চৌধুরী, আকবর হাকিম, ইমরান আহমেদ, আতিক-ই-রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।