তিন দিনের সফরে আসছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের ‘সাফল্য’ দেখতে আসছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2016, 06:50 AM
Updated : 16 Sept 2016, 02:33 PM

তিনি ঢাকা আসবেন ১৬ অক্টোবর, থাকবেন তিন দিন; ১৭ অক্টোবর ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ ঢাকাতেই উদযাপন করবেন।

সেদিন ঢাকায় দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে একটি ‘পাবলিক লেকচার’ হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন কিম।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বক্তৃতা করবেন ওই অনুষ্ঠানে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ৮ থেকে ১০ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন শেষ করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসডিন্ট।

ঢাকায় অবস্থানকালে কিম শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও তিনি ঘুরে দেখবেন বলে অর্থমন্ত্রী মুহিত এবং বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

মুহিত বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এমডিজি) বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট অভিভূত। তাই নিজের আগ্রহেই আমাদের দেশ সফর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপলক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। বাংলাদেশে এবার দিবসটি ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হবে।

বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মন্তব্য করেন মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছর অক্টোবরে পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় সংস্থাটির ১৮৮টি দেশের প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছিলেন।

লিমায় বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের ওই সম্মেলন চলাকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার গল্পকে ‘বিস্ময়কর’ বলেছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।

মুহিত বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ এবং অতিদরিদ্রের হার ছিল ৯ শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ১২ শতাংশে নামবে বলে আশা করা যায়।

“আমাদের এখানে অলস শ্রমশক্তি নেই। দারিদ্র্যকে বিতাড়িত করতে সবাই কিছু না কিছু করছে। পাশাপাশি দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে। দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি সরকার বৈষম্যও দূর করছে।”

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকায় তিন দিনের সফরে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

“এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অর্জন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, অনুকরণীয় হয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু আয় কম হওয়ার পরও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র অবলম্বন নয়, স্বল্প আয় নিয়েও অনেক অর্জন সম্ভব। এ সাফল্য দেখতেই বাংলাদেশ সফরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিম ইয়ং কিম হবেন বিশ্ব ব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট যিনি ঢাকা আসছেন। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা প্রথম বাংলাদেশ সফর করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালের নভেম্বরে আসেন তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টদের মধ‌্যে পল উলফোভিজ ও জেমসউলফেনসনও বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন এর আগে।

দক্ষিণ কোরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জিম ইয়ং কিম ২০১২ সালের ১ জুলাই বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হন। তার এ সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেওয়ায় বিশ্ব আর্থিক খাতের ‘মোড়ল’ এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং প্রতিবছরই বাংলাদেশে তাদের সহায়তার পরিমাণ বাড়ছে।