বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবেদনটা কেন এখনও রেখে দিয়েছে। আমরা এটা কমিটির কাছে দিতে বলেছি।”
সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিটির সব সদস্য মনে করেন, ৮০ মিলিয়ন ডলার যেটা গেছে সেটাতো গেছে। কিন্তু দেশের ভাবমূর্তিটা বড় বিষয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করাটা জরুরি। কারা দায়ী সেটা বের করতে পারলে অন্যান্য দেশও এ বিষয়ে সজাগ হতে পারবে।”
গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাকে বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এ বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়।
ওই ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই সময়ই বলেছিলেন, তিনি এই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত ২১ জুন মুহিত বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে ঈদের পর।
আর গত ২১ জুলাই সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।”
তবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আড়াই মাস হতে চললেও সেখানে কী আছে তা জানতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ।
ফিলিপিন্স যাবে সংসদীয় কমিটি
এদিকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ‘ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ হিসেবে’ রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার জন্যে ফিলিপিন্সে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ফিলিপিন্সে নতুন সরকার এসেছে। সিনেট কমিটিও নতুন। টাকা ফেরত আনার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সহযোগিতা করছে। এখন ফিলিপিন্সের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাইছি।”
ফিলিপিন্সে ঢোকা টাকার একটি বড় অংশ জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এ নিয়ে দেশটির সিনেট কমিটির শুনানির মধ্যে এক ক্যাসিনো মালিক দেড় কোটি ডলার সরকারের হাতে ফেরত দেন, যা বাংলাদেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ফিলিপিন্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ সাম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, পুরো ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারই ফেরত পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন, কারণ দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট রডরিগো দোতার্তে তেমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন।
ফিলিপিন্সের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “যেহেতু তারাও রাজনীতিক, আমরাও রাজনীতিক- সেজন্য রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করতে সিনেট কমিটি, ওদের আইনমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যায় কীনা সেটা প্রস্তাব দিয়েছি।”
এ কারণে সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দলকে ফিলিপিন্সে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার এখন বিষয়টি বিবেচনা করবে।”