আয়কর রিটার্ন দাখিলের শর্তে গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিয়েছে সরকার।
Published : 12 May 2016, 04:07 PM
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের স্বাক্ষরে গত ৪ মে পাঁচ বছরের জন্য এই কর অব্যাহতির আদেশ জারি করা হয়।
এতে আয়কর অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে বলা হয়, “সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদের আয়ের উপর আরোপণীয় কর প্রদান হইতে নিরীক্ষা বিবরণীসহ আয়কর রিটার্ন দাখিল করার শর্তে অব্যাহতি প্রদান করল।”
এনবিআরের এই আদেশ গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।
১৯৮৩ সালে সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব সময়ই নোবেলজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক সব ধরনের কর অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছে।
এই সুযোগ প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ৩৩ ধারার আওতায়। ২০১৩ সালে অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করা হলেও ওই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি তিন বছর পরপর এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে কর অব্যাহতির মেয়াদ নবায়ন করে আসছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জুলাই ওই প্রজ্ঞাপন জারি হয়, যার মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গতবছর এপ্রিলে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আয়কর, সুপার ট্যাক্স, ব্যবসায় মুনাফা করসহ শর্তহীনভাবে সব ধরনের কর অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়।
এরপর গত ২৪ নভেম্বর এনবিআরের বোর্ড সভায় কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতির আবেদন নিয়ে এনবিআর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায়।
অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর আইনগত ভিত্তি খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে গ্রামীণ ব্যাংককে আরও পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করে এনবিআর।
২০১৩ সালে আইন পাসের আগে অর্থমন্ত্রী মুহিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কর অব্যাহতির সুযোগ শেষে গ্রামীণ ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘কর অবকাশ’ সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তবে ওই সুযোগ সব সময়ের জন্য নয়।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও এর তখনকার এমডি মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
তবে অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচন নয়, বরং গরিব মানুষের ঘাড়ে দেনার বোঝা চাপিয়ে তাকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের পথে নিয়ে যায় ক্ষুদ্রঋণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে ক্ষুদ্রঋণ ধারণার সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ নয়, ‘মাইক্রো সেভিংসের’ মাধ্যমেই দেশের সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের উন্নয়ন সম্ভব।