আইটি নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে অর্থ লোপাট: সচিব

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2016, 01:06 PM
Updated : 14 March 2016, 11:52 AM

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, এস কে সুর চৌধুরী ও নাজনীন সুলতানার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর আসলাম আলম বলেন, “এখানে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি আইটিনির্ভর কাজ।”

এই ঘটনায় সরকারের অবস্থান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এটাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করেছি। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা এখন বুঝতে পারলাম আমাদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি আইটি নিরাপত্তা।”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়।

ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন  প্রকাশ করলে আলোচনার ঝড় ওঠে।

গভর্নরের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক প্রসঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের  সচিব আসলাম আলম বলেন, “আমি আজকে এসেছি মূলত পুরো বিষয়টি জানার জন্য (ফ্যাক্ট ফাইনডিং মিশন)। এখানে সবার সাথে আমি কথা বলেছি। যেটা জানতে পারলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্টা হয়েছিল।

“এর মধ্যে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ঠেকানো গেছে। বাকি ১০১ মিলিয়ন ডলার প্রসেসড হয়ে ফিলিপিন্স ও শ্রীলংকায় গিয়েছিল। তারমধ্য থেকে শ্রীলংকায় পাচার করা ২০ মিলিয়ন ডলার ঠেকানো গেছে, যার ১৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার ফেরত এসেছে, যেটা ইতিমধ্যে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।”

ফিলিপিন্সের অ্যান্টি মানিলন্ডারিং টিম সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করেছে বলেও জানান তিনি।
“ওইখান থেকে ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। বাকি টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। তবে ফিলিপিন্সের কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেনসিক এক্সপার্ট নিয়োগ করেছে জানিয়ে সচিব এম আসলাম আলম বলেন, “ব্যাংকের যেসব সিস্টেমস আছে সেগুলো তারা পরীক্ষা করছে। এটার কাজ এখনও চলমান আছে। আরও কিছুদিন সময় লাগবে সকল কম্পিউটার পরীক্ষা করার জন্য।”

সামগ্রিক বিষয়ক অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

এম আসলাম আলম বলেন, “আমি এখানে মূলত ফ্যাক্ট ফাইনডিং মিশনে এসেছি। তথ্য উপাত্ত তাদের থেকে নিলাম, কথা বলেছি। আমি অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমার রিপোর্ট সাবমিট করব।”

এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ লোপাটের ঘটনা সরকারকে অবহিত না করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঘটনাটি সরকারের গোচরে না আনার বিষয়ে আসলাম আলম বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানানো হয়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিং হয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অডিট কমিটির বৈঠক হয়েছে, সেখানে এটা তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) এজেন্ডাভুক্ত করেনি। কেন করেনি সেটা জানতে চেয়েছি, তারা বলছে যে বিষযটি তদন্ত করে পুরো চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছে।”

এমন জবাবে আপনি কি সন্তুষ্ট এমন প্রশ্নের জবাবে আসলাম আলম বলেন, “আমি মনে করি বিষয়টি সাথে সাথেই জানানো প্রয়োজন ছিল।”

এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর রাজী হাসান বলেন, “কোন পরিস্থিতিতে কি কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঘটনা অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানায়নি সে বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”

হাতিয়ে নেওয়া টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে যাওয়ায় তা ফেরত পেতে ‘যথেষ্ট’ সময় লাগবে বলে জানান আসলাম আলম।

আর এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর রাজী হাসান বলেন, “এ ধরনের অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের স্টার প্রোগ্রাম ‘স্টোলেন এসেট রিকভারি প্রোগ্রামের’ অধীনে আনতে হয়। এতে আইনগত বেশকিছু দিক রয়েছে।

“যে দেশ থেকে টাকা পাচার হয় সেই দেশের কোর্টের ভারডিক্ট লাগে, এই ভারডিক্ট নিয়ে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় কিংবা ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন এগেইনেস্ট করাপশনের আওতায় যে দেশে টাকাটা যায়, সেই দেশের কোর্টের ভারডিক্ট লাগে। এরপর নিষ্পত্তি হয়।”

রাজী হাসান বাংলাদেশে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের চেয়ারম্যানও।

তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ডিউ ডিলিজেন্সের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেসব অ্যাডভাইস গেছে, তার কিছু অ্যাডভাইসের বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিল। যার জন্য বেশিরভাগ অ্যাডভাইসের পেমেন্ট স্টপ করা হয়েছে। যে ৫টা গিয়েছে সেটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের দিক থেকে কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই পেমেন্ট করা হয়েছে। কাজেই এ বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন রয়েছে।”

হ্যাকিংয়ে ঘটনা কোন পর্যায় হয়েছে জানতে চাওয়া হলে রাজী হাসান বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হয়েছে, না বাইরে থেকে হয়েছে তা তদন্তের বিষয়।

“আমরা এফবিআইয়ের সম্পৃক্ততা আশা করছি। কারণ এফবিআইয়ের সাইবার বিষয়ক একটি শক্তিশালী ইউনিট আছে। সারা বিশ্বব্যাপী কোথায় কী হচ্ছে তা তদন্তু করার ক্যাপাসিটি তাদের আছে। আমাদের বোর্ডসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়াতে এগোবো।”