১০ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ ৮২ হাজার কোটি টাকা

শুধু এপ্রিলেই নেওয়া হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মোট ঋণের বড় অংশই দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 06:42 PM
Updated : 15 May 2023, 06:42 PM

অর্থবছরের শেষ দিকে এসে সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়ছে; জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে নিয়েছে ৮২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, যা বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এ ঋণের মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর আগের মাস মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে সরকারের মোট নিট ব্যাংক ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসময়ে নেওয়া মোট ঋণের মধ্যে গত এপ্রিলে নিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মধ্যে একক মাসে সর্বোচ্চ।

আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ৩৪ হাজার ৯ কোটি টাকা।

সরকারের ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সরকারের ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ে-আবার কমে যায়। প্রয়োজনে নিয়েছে, আবার সমন্বয় হয়ে যাবে।’’

সরকারের ব্যাংক ঋণ অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বাড়তে থাকার আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিকল্প উৎস থেকে ঋণ নিতে পরামর্শ দিয়েছিল।

গত ফেব্রুয়ারি সরকারের ব্যাংক ঋণের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। অন্যদিকে নন-ব্যাংক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার হার কমছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমে আসায়। এ প্রবণতা মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।

বিকল্প উৎসমুখী হতে এমন পরামর্শ এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে এবং মূল বিকল্প সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের (এনএসসি) পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার কথা বলছেন। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের পর কান্ট্রি প্রতিবেদনে পর্যায়ক্রমে এনএসসি নির্ভরতা কমাতে বলেছে। সরকারও বৈশ্বিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ আর্থিক ও ব্যাংক খাতের অনেক পরামর্শ মানতে সম্মত হয়েছে। এতে ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে বাড়ানোর পথে যাওয়ার খুব বেশি সুযোগও থাকছে না সরকারের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ

অন্য উৎস থেকে না পেয়ে নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতেই বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-এপ্রিল সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়েছে এক বছরে ৬৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বা ৯৩৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

এ নিয়ে গত এপ্রিল শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়াল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

অপরদিকে গত ১০ মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা, গত অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল ২৬ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা।

গত এপ্রিল শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরই ২ লাখ ২১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ২ লাখ ২১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। পরে তা কিছুটা কমিয়ে র্নিধারণ করা হয় ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।