“মামলা, মোকাদ্দমা, চাপ, ভয়-ভীতি, শুধু সেটা না, এখানে বলতে দ্বিধা নাই যে বিগত সরকারের আমলে অনেক পত্রিকার সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।”
Published : 23 Feb 2025, 07:15 PM
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা-মোকাদ্দমা, চাপ, ভয়-ভীতিসহ বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেশের সংবাদপত্রকে ‘বড় আক্রমণের মধ্যে’ রাখা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিগত সময়ের নানা চাপের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
মতিউর রহমান বলেন, “সংবাদপত্র হিসেবে আমরা একটা বড় আক্রমণের মধ্যে ছিলাম। মামলা, মোকাদ্দমা, চাপ, ভয়-ভীতি, শুধু সেটা না, এখানে বলতে দ্বিধা নাই যে বিগত সরকারের আমলে অনেক পত্রিকার সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বড় বড় ব্যক্তিখাতের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে আমরা সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”
এনবিআরের সঙ্গে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) আলোচনায় মতিউর রহমান বর্তমান সময়কে ‘সম্ভাবনার সুযোগ’ হিসেবে দেখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা কথা বলতে পারি। আলোচনা করতে পারি। এবং আমাদের কথাগুলো আপনাদের সামনে হাজির করতে পারি। উনাদের কাছেও আমরা বলতে পারি।”
চাপের পাশাপাশি বিগত সরকারের আমলে ‘অসহযোগিতার’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা সেবা শিল্প হিসেবে বিবেচিত। তার মানে আমাদের বিশেষ কিছু করার আছে। আবার বিশেষ কিছু পাওয়ারও থাকতে পারে যেহেতু আমরা সেবা শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু অভিজ্ঞতার থেকে এটা বলতে হচ্ছে, গত ১৬ বছর আমরা সংবাদপত্র হিসেবে, নিউজপেপার হিসেবে কোনরকম সহযোগিতা-সাহায্য পেতাম না।
“একপেশে সিদ্ধান্ত সরকার দিতেন। বাজেট আলোচনাতে আমরা আসতাম, কিন্তু জেনে আসতাম যে কিছু হবে না।”
সংবাদপত্র শিল্প ‘দুর্বিষহ সময়’ পার করছে দাবি করে তিনি বলেন, “সত্যিই এটা আমাদের বিগত অনেক বছরের অভিজ্ঞতার মধ্যে এখন সংবাদপত্র শিল্পে সবচেয়ে দুর্বিষহ সময়। প্রধান কারণ, আমাদের সংবাদপত্রের পাঠক কমছে। সংবাদপত্রের ছাপা কমছে। পাশাপাশি আমরা দেখি অনলাইন, ডিজিটাল, সামাজিক মাধ্যমে, ফেইসবুক, ভিডিও অডিও সবমিলিয়ে টিকে থাকা কঠিন।
“নানা অর্থনৈতিক কারণে ব্যক্তি খাতের বিজ্ঞাপন কিছুটা হলেও এখন আটকে আছে। সরকারি বিজ্ঞাপন কিছু পাই, কিছু ছাপে, সেসবের বিল পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর চলে যায়।”
এ শিল্পের ওপর থাকা করপোরেট করকে ‘জুলুম’ হিসেবে বর্ণনা করে মতিউর রহমান বলেন, “করপোরেট ট্যাক্স গার্মেন্টসে ১২ পারসেন্ট। সংবাদপত্র হিসেবে পায় সাড়ে ২৭ পারসেন্ট। এটা কোন যুক্তিতে? আর কয়টা সংবাদপত্র লাভ করে? আপনাদের কাছে তো ফাইল-টাইল যায়। আপনারা তো দেখেন।
“এমন অবস্থায় এ করপোরেট ট্যাক্সের কোনো মানেই হয় না। আমি মনে করি এ করপোরেট ট্যাক্সটা বড় অন্যায়। এটা একটা জুলুম। যারা সৎভাবে ট্যাক্স দিতে চাইবে তাদের জন্য এটা একটা জুলুম।”
সংগঠনের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় বিশেষত ডলারের ক্রমবর্ধমান বিনিময় হার এ শিল্পকে নতজানু করে ফেলেছে। বিগত কয়েক বছরে সংবাদপত্র শিল্প বিকাশে সরকার আমাদের কোনো প্রস্তাব আমলে নেয়নি। এ বছরের বাজেটে আমাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়া হোক।”
লিখিত প্রস্তাবে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক ২ শতাংশ করা (বর্তমানে প্রযোজ্য ৫ শতাংশ), ভ্যাট ১৫ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ করা, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর (এটি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ন্যূনতম ১ শতাংশ করা এবং সংবাদপত্র শিল্পকে সেবামূলক শিল্প হিসেবে বিবেচনা করে সর্বনিম্ন কর্পোরেট ট্যাক্স নির্ধারণ অথবা অবলোপন করার দাবি জানানো হয়।
করপোরেট কর হার ও ভ্যাট না কমানোর পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তার ভাষ্য, যাদের জন্য কমানো হয়েছে সেখানে মূলত ‘কম্প্রোমাইজ’ করা হয়েছে। তিনি বরং সকল খাতে একক হারের পক্ষে।
তবে সংবাদপত্রের স্বল্প মুনাফার বিবেচনায় আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও অগ্রিম কর (এটি) কমানোর আশ্বাস দেন তিনি।