“বৈদেশিক মুদ্রার দর এভাবে স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে”, বলেন তিনি।
Published : 28 Aug 2024, 10:03 PM
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়া অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, “রিজার্ভ থেকে কোন ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক ডলারও বিক্রি করা হয়নি।
“তাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার কোনো আশঙ্কা নেই, বাড়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, কিছু না কিছু ডলার তো আসবে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো হবে।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমদানি মূল্য বেড়ে যায়। এলসির জন্য বেসরকারি ব্যাংককে ডলার সরবরাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বিক্রি শুরু করে। এতে গ্রস ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে রিজার্ভ ২০ বিলিয়নে নেমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ২১ অগাস্টের তথ্য বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকে সরকারি ঋণপত্র বা এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হওয়ার আগের থেকেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
গভর্নর বলেন, “ইন্টারব্যাংক মার্কেট থেকে ডলার নিয়ে সরকারি ঋণপত্র খোলার জন্য সোনালী ব্যাংকে দেওয়া হচ্ছে, যাতে সরকারি ঋণপত্র যা খোলা হয়ে গেছে, তা পেমেন্ট করা যায়।“
ইন্টার ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই ডলারগুলো সোনালী ব্যাংকে সরকারি এলসি খোলার জন্য দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পেমেন্ট না করার জন্য বাইরের দেশের পোর্টে জাহাজ আটকে আছে। সেই জাহাজ দেশের পোর্টে সময়মত যদি আসে তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলার বাজার থেকে নিয়ে জ্বালানি খাতের এলসি খোলার জন্য দিচ্ছে বলেও জানান গভর্নর। ৩৫ মিলিয়ন দেওয়া হয়েছে কৃষিপণ্য আনার জন্য, আরও ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন দেওয়া হবে।
ডলারের দরে এক রকম স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করছেন গভর্নর। বলেন, “বৈদেশিক মুদ্রার দর এভাবে স্থিতিশীল থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করলেও বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ডলারের দর ১২০ টাকার আশেপাশে আছে।
আগামী ৮ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা গেলে সুদহার কমিয়ে আনা যাবে বলেও মনে করছেন আহসান মনসুর।
তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসছে। এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে আরও দুই মাস পর।
“বিশ্ববাজারে তেলের পরিস্থিতি ভালো, দাম কিন্তু আর তেমন বাড়ে নাই। গম ও অন্যান্য ভোগপণ্যের দামও কমেছে। তবে চালের দাম কমে নাই। কিন্তু এই বর্ষা মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণের চাল হবে। ভারতেও হবে, ভিয়েতনামেও হবে আর থাইল্যান্ডেও হবে। বাংলাদেশে কী হবে তা জানি না।”
আগামীতে চালের দাম কমে আসবে বলেও আশা করছেন গভর্নর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলছে, অগাস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে হয়েছে, যা জুনেও ছিল এক অঙ্কের ঘরে।