“শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে অনেক ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়।”
Published : 03 Jun 2024, 09:50 PM
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।
সোমবার জাতীয় সংসদে ইউনিসেফ ও শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের যৌথ আয়োজনে ‘জাতীয় বাজেটে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা: প্রাক-বাজেট ব্রিফিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি এবং স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিষয়ক বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরামের সদস্য ও ইউনিসেফের (জেনপি)’ প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিসেফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ তারা সংসদ সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করেছে, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ ও বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে।
আগামী বাজেটে এই তিন খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং এগিয়ে যাওয়ার সুপারিশও তুলে ধরা হয় সেখানে। বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আট বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী শিশুরা এই আয়োজনে অংশ নেয়। ব্রিফিংয়ে তারা তাদের সমবয়সীদের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেছে।
কুড়িগ্রামের ১১ বছর বয়সী শিশু সাংবাদিক ওয়াইজ আবতী বলে, “আমরা যদি বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারি, তাহলে সেটি আমাদের মতামত, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে বাধাগুলোর সম্মুখীন হই, সেগুলো এবং তার সাথে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত চাহিদাগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।”
ইউনিসেফ বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়লেও, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ আনুপাতিক হারে কমেছে।
শিশুদের জন্য সুচিন্তিত বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওয়াইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গ্যুয়েভা বলেন, “শিশুদের পেছনে বিনিয়োগ করা একটি স্মার্ট অর্থনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে অনেক ভালো প্রতিদান পাওয়া যায়। তাই বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে শিশুদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বাজেটের সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।”
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, সংসদীয় ককাসের সদস্যরা বিষয়ভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দলীয়সহ বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করতে পারেন। তাদের পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা সহজ হবে।
“বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া এবং এর বাস্তবায়নে যাতে দেশের প্রতিটি শিশুর কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন থাকে তা নিশ্চিত করা নীতিনির্ধারক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।”
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমাতে পেরেছে। তবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, ওষুধ ও সরঞ্জাম বাড়ানো এবং টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ।
এছাড়া শিক্ষা খাতে জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানো, পাঠ্যক্রম সংস্কার, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও বিদ্যালয়গুলোকে তাপ প্রতিরোধী করার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া পরামর্শও এসেছে।
আর সামাজিক সুরক্ষা খাতে, যাদের বিশেষ প্রয়োজন তারা ঠিকমত সেবা পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ।
তরুণদের মতামত তুলে ধরতে ইউনিসেফ ২৮ হাজারের বেশি তরুণের মতামত নিয়ে একটি ‘ইউ-রিপোর্ট’ জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৪ শতাংশ তরুণ মনে করে, শিশুদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরও বেশি ব্যয় করা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।