এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি: কর, ট্যারিফ ও প্রণোদনা ব্যবস্থা সংস্কারের পরামর্শ

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 04:48 PM
Updated : 3 Sept 2022, 04:48 PM

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যমান কর ব্যবস্থাপনা, রপ্তানিমুখী শিল্পে প্রণোদনা ও ট্যারিফ ব্যবস্থার সময়োপযোগী সংস্কারের পরামর্শ এসেছে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন উপ কমিটি থেকে।

শনিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দিনব্যাপী এ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালা থেকে সুপারিশগুলো আসে বলে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এদিন এলডিসি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়ক জাতীয় কমিটির ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ সংক্রান্ত উপ কমিটির জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তীতে বাংলাদেশকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেজন্য প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজে সহায়তার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক সাতটি উপ কমিটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা কমে যাবে। এ কারণে রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট-এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট-পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে।

তবে এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানিতে বর্তমান নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকির মধ্যে যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় সেগুলো ক্রমান্বয়ে কমিয়ে এর পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার উপায় উদ্ভাবন করা প্রয়োজন বলে পরামর্শ এসেছে।

কর্মশালায় উপ কমিটির অধীনে গঠিত তিনটি স্টাডি গ্রুপের তিনজন আহ্বায়ক মূল সুপারিশ উপস্থাপন করেন। কর সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে উপস্থাপনা করেন এনবিআর সদস্য (কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ, ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক এবং রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আরফিন আরা বেগম।

কর্মশালায় ‘কর সংক্রান্ত বিধিবিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপের উপস্থাপনায় কর ব্যয় সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের পরিধি বাড়ানোর উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

এছাড়া রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর (যেমন, নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইন) ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজতর করা ও পণ্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।

‘ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপের সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিও এর বন্ড ডিউটি হার সীমা অতিক্রম করেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার সীমার মধ্যে নিয়ে আসা।

নূন্যতম আমদানি মূল্য ব্যবস্থা ডব্লিউটিও এর ‘এগ্রিমেন্ট অন কাস্টমস ভ্যালুয়েশনের’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সে কারণে তা পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়া এবং পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য ‘প্যারা ট্যারিফ’ ও সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে আনা।

ভর্তুকি বিষয়ক স্টাডি গ্রুপে উপস্থাপনায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে নগদ সহায়তা দেওয়াতে কোনো অসুবিধা না হলেও উত্তরণের পর শিল্প পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধের কথা তুলে ধরা হয়। এজন্য এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখছে বলে জানায়।

এছাড়া বর্তমানে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রাপ্ত খাতগুলোতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের যে শর্ত রয়েছে তা বাদ দেওয়ার পরামর্শ এসেছে এ গ্রুপ থেকে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অর্থ বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়েক সেন ও পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার সেখানে বক্তব্য রাখেন।

প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।