মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও চট্টগ্রামে অতি ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
Published : 07 Aug 2023, 04:07 PM
টানা অতি ভারি বৃষ্টিতে চতুর্থ দিনেও পানিতে ভাসছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। চারদিন ধরে কোথাও কোমর, কোথাও হাঁটুসমান পানিতে বন্দী হয়ে পড়া নগরীবাসী পড়েছেন বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের কষ্টে।
এমন অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তরও কোনো সুখবর দিতে পারেনি। মৌসুমী বায়ু প্রবল থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও চট্টগ্রামে অতি ভারি বর্ষণের আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দুই দিনে চট্টগ্রামে মোট ৪৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাতভর টানা বৃষ্টির পর শুক্রবার সকালে জোয়ার শুরু হলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায়।
শনিবার সকাল ও দুপুরেও জলাবদ্ধতা ছিল। এরপর শনিবার আবারও রাতভর তুমুল বর্ষণে নগরীর নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যায়।
রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিন নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, চকবাজার, ফুলতল, চেয়ারম্যান ঘাটা, কে বি আমান আলী সড়ক, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, আরাকান রোড, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, ডিসি রোড, হালিশহরের কয়েকটি এলাকা, সল্টগোলা-ইপিজেড সড়ক, বড়পোলসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে যায়।
ওইদিন দুপুর থেকে নগরীতে নতুন করে শমসেরপাড়া, ঈশান মিস্ত্রির হাট, অক্সিজেন মোড়, মৌলভি পুকুর পাড়, আনন্দবাজার, হালিশহরের এল ব্লক, পুলিশ লাইন, শাপলা আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ ও হাজীপাড়া এলাকায় পানি বাড়তে থাকে।
এরপর বিকাল টানা মুষলধারয় বৃষ্টিতে আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, মুহুরী পাড়া, ব্যাপারি পাড়া, মিস্ত্রি পাড়া এবং হালিশহরের বিভিন্ন ব্লকের নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যেতে থাকে।
সন্ধ্যার পর কিছুটা বিরতি দিয়ে রাত ১০টার পর থেকে আবার ভারি বর্ষণ শুরু হয়। রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয় জোয়ার। এই জোয়ারের সময়ে আগ্রাবাদ ও হালিশহরের বেশিরভাগ এলাকা ডুবে যায়।
সোমবার সকালে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, কাপাসগোলা এলাকায় পানি ছিল রোববারের তুলনায় কম। তবে আগ্রাবাদ ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিল হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।
দক্ষিণ আগ্রাবাদের বাসিন্দা সামিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকাল দুপুর থেকে এলাকায় পানি ঢুকছে। নিচতলার প্রায় পুরোটা পানির নিচে। পানির মোটর থেকে শুরু করে সবকিছু তলিয়ে গেছে। এখন খাবার পানির সংকটে আছি।”
নগরীর চকবাজার ফুলতল এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, “চারদিন ধরে আমরা পানিতে আটকা। শুরুতে দুইদিন বিকালে পানি কমেছিল একটু। গতকাল তাও কমেনি।
“এরমধ্যে কিভাবে আছি, ছেলেমেয়ে নিয়ে খাওয়া দাওয়া কিভাবে করছি, সেটা আমরাই শুধু জানি। এভাবে আর কতদিন? কষ্টেরও তো একটা সীমা আছে।”
টানা চারদিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে চক সুপার মার্কেট। সোমবার দুপুরে দেখা যায়, এই বিপণি কেন্দ্রের নিচতলার সব দোকান বন্ধ। সেখানে হাঁটু সমান পানি জমে আছে।
তবে দুপুরের দিকে কাপাসগোলা, বাদুরতলা, কাতালগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় পানি সকালের তুলনায় কিছুটা কম ছিল।
এদিকে নগরীর ষোলশহর রেললাইনের উপর পানি জমে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনি ও রোববার নগরীর পাহাড়গুলো থেকে ৮০০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।