‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে তাদের আসামি করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগ নেতাদের ভাষ্য।
Published : 06 Feb 2024, 09:38 AM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর ও উপাচার্য ভবনে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় চাঁদা দাবির অভিযোগে দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ জনকে, যাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
তবে ছাত্রলীগের দাবি, যাদের আসামি করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতের সেই ঘটনায় তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে তাদের আসামি করা হয়েছে বলে সংগঠনটির নেতাদের ভাষ্য।
ভিডিও দেখে আসামিদের শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এজাহার দায়েরের কথা পুলিশ বললেও মামলার দুই বাদী বলছেন, আসামি হিসেবে কারও নাম তারা মামলায় উল্লেখ করেননি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে নগরী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে ভেঙে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হয় শাটল ট্রেনের ছাদে থাকা ১৫ শিক্ষার্থী। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার একদিন পর শনিবার রাতে দুটি মামলায় মোট ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় এক হাজার জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে আসামিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিএফসি, সিক্সটিনাইন ও বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
একটি মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। সেখানে সাজ্জাদ হোসেন, ইমরান নাজির ইমন, আনিছুর রহমান, নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, অনিক দাশ, অনিরুদ্ধ বিশ্বাস ও মো. আজিমুজ্জাম নামে সতজনকে আসামি করা হয়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
আরেকটি মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক। সেখানে আসামি করা হয় শাকিল হোসেন আইমুন, দীপন বণিক দীপ্ত, রিয়াদ হাসান রাব্বী, নুর মোহাম্মদ মান্না, সৌরভ ভুইয়া, আমিনুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামকে।
দুটি মামলার প্রথমটিতে ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগের প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং দ্বিতীয়টিতে ৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের বাসভবনে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়। চাঁদা দাবির দুই/তিন পর ৭ সেপ্টেম্বরে শাটল ট্রেনের ঘটনাকে পুঁজি করে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক গ্রুপ ‘সিক্সটি নাইন’ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর, সিএফসি গ্রুপ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের এবং বিজয় গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস হোসেনের বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আসামি ১৪ জনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ ১১ জন এই তিন গ্রুপের সদস্য। এর মধ্যে সিক্সটিনাইনের ছয় জন, সিএফসি গ্রুপের চারজন এবং বিজয় গ্রুপের একজন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, “ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পক্ষপাতদুষ্ট মামলা করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই মামলা হবে। কিন্তু যাদের আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলেও ছিল না।
“সাজ্জাদ নামে একজন ছাত্রদল নেতাকে আসামি করতে গিয়ে ভুলভাবে অন্য একজন সাজ্জাদকে আসামি করা হয়েছে। যিনি ক্যাম্পাসেই থাকেন না। এরকম অনেক অসামঞ্জস্য আছে মামলায়। চাঁদা দাবির দুটি অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ কিছু জানে না। সেগুলো তিনদিন আগের ঘটনা। মামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসামি করার নেপথ্যে প্রশাসনিক জটিলতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা আছে।”
একটি মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রশাসনিক দায়িত্বের কারণে আমি মামলার বাদী হয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত এজাহারের কোনো কপি আমাকে দেওয়া হয়নি। কোনো সাধারণ ছাত্রের ক্ষতি হোক সেটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন হিসেবে আমি চাই না। আমি এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাকিটা পুলিশ বলতে পারবে।”
অপর মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমেদ বলেন, “আমি আসামি হিসেবে কাউকে শনাক্ত করিনি। শুধু এজাহার দিয়েছি।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, “সাতজন করে দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এজাহার দেওয়া হয়েছে। আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে।”
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)