ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল কীভাবে গণতান্ত্রিক হয়, প্রশ্ন নাছিরের

“সংবিধান সম্মত স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনই ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2023, 04:08 PM
Updated : 18 Feb 2023, 04:08 PM

ক্যান্টনমেন্টে যার সূচনা, সেই বিএনপি কীভাবে ‘গণতান্ত্রিক’ দল হতে পারে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

তিনি বলেছেন, “বিএনপি মুখে বলে- তারা গণতান্ত্রিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। অথচ তারা এর বিপরীত। তাদের দলের জন্মই বন্দুকের নলের মাধ্যমে। অবৈধ ক্ষমতা দখল করার পর তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেছিল।”

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে ‘বিএনপি জামায়াতের তথাকথিত সরকার উৎখাতের নামে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে’ নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন নাছির।

সাবেক এই মেয়র বলেন, “ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া একটি দল কীভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন শাহ আজিজুর রহমান; তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তাকেই প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এবং ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিমের মত একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন।”

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, “তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ এবং সালাউদ্দীন কাদেরকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন জাগে, বিএনপি কি আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে?

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং সমতা-সম্প্রীতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি। তাহলে বিএনপি কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে?”

‘সংবিধান সম্মত’ স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনই ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ উল্লেখ করে নাছির বলেন, “এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এই সত্যটি বিএনপি নেতারা বুঝেও অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতার পথে এগুচ্ছে।

“তারা অতীতে আগুন সন্ত্রাস করে ধন সম্পদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করেছে। এমনকি শত শত নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তার পরও ক্ষমতায় যেতে পারেনি।”

দেশের উচ্চ আদালত জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে নাছির বলেন, “সাংবিধানিকভাবে অবৈধ একজন রাষ্ট্রপ্রধানের গড়া দল বিএনপিও অবৈধ। তাই তাদের মুখে গণতন্ত্রের মায়া কান্না শোভা পায় না এবং নিজেকে মিথ্যা দিয়ে আড়াল করার অপচেষ্টা করছে মাত্র।”

নেতাকর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথেই থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে থাকবো। জনগণের আস্থা ও ভরসা অর্জনে বিগত ১৪ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশকে কী দিয়েছেন, তার বিবরণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।

“বিএনপি বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না। এজন্য বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ঠেলতে দেশে নাশকতা, অরাজকতার জাল বুনছে। এ জাল অবশ্যই ছিন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে।”

সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল না- তখন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে ছিল। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস জনগণ; তাই অরাজকতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে- জনগণের জানমালের নিরাপত্তায়।

“আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অতীতেও বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র সাময়িক সফল হলেও তার স্থায়িত্ব ছিল না। জনগণই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে রাজপথে প্রতিরোধ করেছে। ইতিহাসের শিক্ষা হলো কোনো ষড়যন্ত্রকারী শেষ পর্যন্ত সফল হয় না বরং ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই এখন যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের পরিণতিও একই হবে।”

নগর কমিটির প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা সফর আলী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মশিউর রহমান চৌধুরী, দিদারুল আলম চৌধুরী, জহর লাল হাজারী।