আয়াত শুধু আমার মেয়ে না, আপনাদের সন্তানও খুন হয়েছে: বাবা

‘অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতো’ এমন এক কিশোরকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 05:11 PM
Updated : 9 Dec 2022, 05:11 PM

চট্টগ্রামে শিশু আয়াত খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানবন্ধন করেছেন তার বাবা-মা।

শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণের মানববন্ধন করে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে’ বিচারের দাবি করেন তারা।

আয়াতের মা সাহেদা আক্তার তামান্না বলেন, “আমিই সেই হতভাগা মা, আয়াতের আম্মু...। প্রতিদিনের মত সেদিনও সে আরবি পড়তে যাচ্ছিল। আমাকে বলে, আম্মু যাই। আমি বলি, আচ্ছা যাও।

“আমার শ্বশুর ওকে প্রতিদিনের মতই আমাদের বাসার সামনে হাঁটাহাটি করেন। তখনও আজান দেয়নি তাই একটু সামনের দিকে হাঁটতে যান। তখন সেই নরপশু (আবীর আলী) আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে নিচতলায় নিয়ে হিজাব পেঁচিয়ে হত্যা করে। তারপর ওখান থেকে ব্যাগ ভরে ওর (আবীরের) আম্মুর বাসায় নিয়ে যায়।”

কান্নায় ভেঙে পড়ে সাহেদা আক্তার বলেন, “সেখানে নিয়ে আমার মেয়েকে কেটে সে সাগরে ফেলে দেয়। আমার শুধু একটাই দাবি। শুধু আমার মেয়ে হারায়নি। আপনাদের সবার মেয়ে হারিয়েছে।

“... আমার মেয়ের অনেক শখ ছিল। প্রতিদিন আমার মেয়ে বলত ডাক্তার হবে। মেয়ের কোনো কিছুই পূরণ করতে পারিনি। অকালে আমার মেয়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন হত্যাকারীর দ্রুত ফাঁসি চাই।”

এদিকে এ ঘটনায় বুধবার এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ওই কিশোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আবীর আলীর ‘বন্ধু’। গ্রেপ্তার কিশোর পুলিশকে বলেছে, আয়াতকে অপহরণের এক মাস আগেই আবীর তাকে ওই পরিকল্পনা জানিয়েছিল।

মানববন্ধনে আয়াতের বাবা সোহেল রানা বলেন, “আবীর আলী ও তার বাবা-মা গ্রেপ্তার হয়েছে। ওরা সব জানত। একটা ছেলেকেও পুলিশ ধরেছে। সেদিনের আগেও আমার মেয়েকে তিনবার নিয়ে যেতে চেয়েছিল পারেনি। এক মাস আগে তারা পরিকল্পনা করেছিল।

“আয়াত শুধু আমার মেয়ে না, আজকে আপনাদের সবার সন্তান। শুধু আয়াত খুন হয়নি, এরপর কক্সবাজারেও এভাবে শিশু খুন হয়েছে। আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়। সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এই ঘটনায় যারাই জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দো দ্রুত সাজা দেয়া হোক।”

গত ১৪ নভেম্বর পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হওয়ার পর ইপিজেড থানায় জিডি করে তার পরিবার। সন্ধান চেয়ে পোস্টার ও প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। তার দাদা নাতনির সন্ধান চেয়ে পিবিআইয়ের কাছে আবেদন করেন। পরে পিবিআই তদন্তে নেমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী ১৯ বছর বয়েসী আবীর আলীকে আটক করে।

আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ির সোহেল রানার মেয়ে। তাদের বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকে আবীরের পরিবার।

২৫ নভেম্বর পিবিআই জানিয়েছিল, ‘মুক্তিপণের’ জন্য শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণ করে খুন করেছে তাদেরই এক ভাড়াটিয়ার ১৯ বছরের ছেলে আবীর আলী। শিশুটিকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয় সে।

যার কিছু অংশ আকমল আলী রোডের স্লুইচ গেইটের একটি নালায়, আর কিছু অংশ সাগরে ফেলার কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল আবীর।

ওই দিন তাকে নিয়ে পিবিআই সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি এবং আয়াতের জুতা উদ্ধার করে। আর পরের রাতে আয়াতের বাবা নগরীর ইপিজেড থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

আর গত ৩০ নভেম্বর আউটার রিং রোডের আকমল আলী ঘাট সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের এক গর্ত থেকে আয়াতের দুই পা এবং পরদিন খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে পিবিআই।

আবীরকে দুই দফায় রিমান্ডে নেয় পিবিআই। পরে ২৯ নভেম্বর আবীরের মা-বাবাকেও তিন দিনের রিমান্ডে নেয় সংস্থাটি। 

আরও পড়ুন:

Also Read: আয়াত খুন: আরও এক কিশোর গ্রেপ্তার, হত্যার পরিকল্পনা ‘১ মাস আগে’