“প্ল্যানিং কমিটি আপত্তি দিলেও নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার উপাচার্যের আছে,” বলছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ।
Published : 16 Dec 2023, 05:41 PM
প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিভাগের তরফে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি জানানো হলেও আগামী ১৮ ডিসেম্বর নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকারের দিন ঠিক করা হয়েছে।
বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেজিস্ট্রার অফিস থেকে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন আছে কি না তা বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন প্ল্যানিং কমিটির তরফে আপাতত শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই বলে প্রশাসনকে জানানো হয়। এরপরও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক হিসেবে উপাচার্য একটি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলতেই নতুন নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে ২০২১ সালে ১ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে বিভাগের মতামত জানতে চাওয়া হয়।
২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি শফিউল আজম এক চিঠিতে জানান, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি ‘আপাতত শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই’ বলে মতামত দিয়েছে।
এ বছর ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার সায়েন্সেস, রাজনীতি বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কলা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে একজন এবং প্রভাষক পদে ছয়জনকে নিয়োগ দিতে আবেদন চাওয়া হয়।
প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়া বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় বাংলা বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেন।
তাতে তিনি বলেন, প্ল্যানিং কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং বিভাগকে না জানিয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পরিপন্থি।
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, তা ‘প্ল্যানিং কমিটির প্রস্তাবিত নিয়োগ নীতিমালার পরিপন্থি’ মন্তব্য করে চিঠিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৮৮ প্রার্থীর আবেদন যাচাই করা যুক্তিসঙ্গত হবে না।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা বিভাগের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম জিপিএ ৩ এবং দুই পরীক্ষা মিলে জিপিএ ৭ থাকতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা তার চিঠিতে ওই যোগ্যতাকে ‘হাস্যকর’ বর্ণনা করে লেখেন, যেখানে কলা ও মানববিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনে ন্যূনতম যোগ্যতা (এসএসসি ও এইচএসসি মিলে) জিপিএ ৭ দশমিক ৫, সেখানে বাংলা বিভাগে জিপিএ-৭ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বলেন, “প্ল্যানিং কমিটি আপত্তি দিলেও নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার উপাচার্যের আছে। তাই উপাচার্যের আদেশে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।”
বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শিরিন আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পান। ২০২১ সালের ২৯ মার্চ অবসরের পর পুনরায় তাকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাংলা বিভাগে নিয়োগ নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ১৩ ডিসেম্বর অধ্যাপক শিরিন আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বিষয়টি তার স্মরণে নেই। ‘নথি দেখে’ পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।
এরপর দুই দিন মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।