চট্টগ্রামে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮

বাড়ির সামনের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে মুখোশ পড়া এবং ‘খুঁড়িয়ে’ হাঁটা এক ব্যক্তিকে ধরে এগিয়ে ডাকাতের ওই দলকে ধরেছে র‍্যাব

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2022, 11:30 AM
Updated : 22 Nov 2022, 11:30 AM

চট্টগ্রামের রাউজানে এক প্রবাসীর বাড়ি থেকে শতাধিক ভরি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

ওই বাড়ির সামনের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ‘মুখোশ পরে খুঁড়িয়ে হাঁটা’ এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার পর ডাকাতের ওই দলকে ধরা সম্ভব হয় বলে জানান র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।

মঙ্গলবার চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর রাতে রাউজানের সুলতান পাড়ার প্রবাসী সরোয়ার চৌধুরীর বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়।

“মুখোশ পরা ডাকাতরা সরোয়ারের বৃদ্ধ বাবাকে বেঁধে ১২৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, সোনার বিস্কুট, নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে যায়।”

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. মুসা (৩০), সাইদুল ইসলাম ওরফে সাইফুল (৩০), খোরশেদুল আলম (২৮), সাজ্জাদ হোসেন (২৭), মো. বাপ্পী (২৬), সজল শীল (২৭) ও মো. ইদ্রিস ওরফে কাজল (৩৪) এবং স্থানীয় স্বর্ণাকার বিপ্লব চন্দ্র সাহা (৩৯)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪৬ ভরি স্বর্ণ এবং ২৩ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। তবে ডাকাতির সাথে জড়িত এমরান নামে একজন পলাতক বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইউসুফ জানান, সরোয়ার তার মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে ২৭ অক্টোবর দেশে আসেন।

“আসার সময় শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে কিছু স্বর্ণ আনেন। পরদিন বাড়িতে তার বাবাকে রেখে অন্য সদস্যরা বিয়েতে যান। ওই দিন রাতে ডাকাতরা গ্রিল কেটে বাড়িতে প্রবেশ করে।“

এই র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার কাজল ওই এলাকাতেই থাকেন। তাকে সরোয়ারের বাড়িতে ডাকাতির প্রস্তাব দেন সাইফুল। সাইফুল বিভিন্ন সময়ে চুরি, চোরাই মোটর সাইকেল বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন।

“সাইফুল এক লাখ টাকার বিনিময়ে কাজলকে ডাকাতির জন্য একটি বাড়ি ঠিক দেওয়ার কথা বলেন। কাজলই তাকে সরোয়ারের দেশে আসার কারণ এবং ওই রাতে বাড়ির সবার বেড়াতে যাওয়ার তথ্য দেন। খবর পেয়ে সাইফুল লোকজন নিয়ে সরোয়ারের বাড়িতে ডাকাতি করতে যায়।”

র‌্যাব-অধিনায়ক জানান, ডাকাত দলের ধারণা ছিল বাড়ি খালি থাকবে। কিন্তু বাড়িতে সারোয়ারের বাবাকে দেখে তাকে কম্বল মুড়িয়ে পা বেঁধে গলায় ছুরি ধরে রাখে। তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি কেটে ১২৮ ভরি স্বর্ণ, টাকা, সোনার বিস্কুট ও পাঁচটি মোবাইল ফোন সেটসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে মালামাল প্রথমে সাইফুল নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। পরে মুছাকে সঙ্গে নিয়ে কিছু স্বর্ণ এলাকার বিপ্লবের দোকানে নিয়ে যান। বিপ্লব স্বর্ণগুলো অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে বুঝতে পেরে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দরে ২৯ লাখ টাকা দিয়ে বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার ও সোনার বিস্কুট কেনেন।

“সাইফুল স্বর্ণগুলো বিক্রির পর কথামত কাজলকে এক লাখ টাকা দেয়। এরপর মুছা ও সাইফুল মিলে ১৬ লাখ টাকা নিজেদের জন্য রেখে বাকি টাকা অন্যদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়।”

কীভাবে ডাকাত দল ধরা পড়ল জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “এ ঘটনায় সরোয়ারের করা মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে খুঁড়িয়ে হাঁটা এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। সে সূত্র ধরেই মূলত ডাকাত দলের সন্ধান পাওয়া যায়।

“এটি ক্লু-লেস একটি মামলা ছিল। সবাই মুখোশ পরা থাকায় কাউকে চেনা যায়নি। কিন্তু খুড়িয়ে হাঁটা ওই ব্যক্তিকে দেখে আমরা খোঁজ নেওয়া শুরু করি। এক পর্যায়ে জানা যায় ওই ব্যক্তি সাইফুল।“

এরপর খোঁজ খবর নিয়ে সাইফুলের অতীতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তথ্য পায় র‌্যাব। আর আর্থিকভাবে সচ্ছল না হলেও সাত লাখ টাকা দিয়ে মুসার জমি কেনার চেষ্টার খবর র‍্যাবের তদন্তে ধরা পড়ে।

এরপর সোমবার উপজেলার গহিরা এলাকা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করে সাত লাখ উদ্ধার করা হয় এবং তার স্বীকারোক্তিতে সাইফুল এবং অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।