খোঁড়াখুঁড়ি: আর্জি জানালেন মেয়র, আশ্বাস দিল চট্টগ্রাম ওয়াসা

“আমরা সবাই উন্নয়নের কথা বলি, কিন্তু কষ্ট পেলে হইচই করি। মানুষের কষ্ট যাতে কম হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে,” বলেন মেয়র।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 02:04 PM
Updated : 15 March 2023, 02:04 PM

পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজে খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ কমাতে একসাথে সব এলাকায় কাজ শুরু না করার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল।

তার এই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ কথা দিয়েছেন, একবারে একটি বা দুটি ওয়ার্ডে শুধু রাস্তা কাটা হবে।

মঙ্গলবার রাতে নগরীর পাঁচ তারকা রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র এই আহ্বান জানান।

ওই সভায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ও সিটি করপোরেশনকে না জানিয়ে অন্য প্রকল্পের কাজে ওয়াসার সড়ক কাটা, নগরীর সব এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ না থাকা, লাইন থাকলেও পানি না পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশীজনরা মতামত জানান।

সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সরকারের সদিচ্ছা বাস্তবায়নে ওয়াসা এই স্যুয়ারেজ প্রকল্প করছে। এতে ২০ লাখ মানুষ সুফল ভোগ করবে।

“২০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন এবং প্রায় ২৮ হাজার বাড়িতে সংযোগ স্থাপন শুরু হলে সিটি করপোরেশনের রাস্তাগুলোর অবস্থা কী হবে? মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এখনও ওয়াসা বিভিন্ন কাজ করছে। রাস্তায় একটু গর্ত হলে মানুষের আঙ্গুল ওঠে সিটি করপোরেশনের দিকে।”

মেয়র বলেন, “নগরবাসী বলে রাস্তা কাটলে কাজ শেষে সাথে সাথে কার্পেটিং কেন করে দিই না। ওয়াসা বলে, তাদের পরীক্ষা করতে হবে লিকেজ আছে কিনা। কার্পেটিং করলেও রাখতে পারি না লিকেজের কারণে।

“আমরা সবাই উন্নয়নের কথা বলি, কিন্তু কষ্ট পেলে হইচই করি। মানুষের কষ্ট যাতে কম হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”

স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে হালিশহর ক্যাচমেন্টের আওতায় নগরীর ২১ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৩ নম্বর উত্তর পাহাড়তলি, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৫ নম্বর রামপুরা, ২৬ নম্বর হালিশহর, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা, ৩৭ নম্বর ‍উত্তর-মধ্যম হালিশহর এই ১২টি ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ অংশ এবং ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৩ নম্বর পাহাড়তলি, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ২১ নম্বর জামালখান, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গি বাজার এবং ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এই ৯টি ওয়ার্ডের আংশিক মিলিয়ে মোট ৩৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পয়ঃনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হবে।

মেয়র এসব এলাকার নাম উল্লেখ করে বলেন, “যদি এত এলাকায় একসাথে কাজ শুরু হয় তাহলে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হাঁটাচলার পথও থাকবে না। আমার প্রস্তাব- আপনারা একটা ওয়ার্ডের কাজ শেষ করে আরেকটা ধরুন। কষ্ট কমবে মানুষের। ভালোভাবে কাজও করতে পারবেন।

“শুনেছি ৪-৫ মিটার গভীর গর্ত করতে হবে। আর চওড়ায় যদি ৩ ফুটও কাটেন। এত গভীর রাস্তা কাটলে পুরো রাস্তা ধসে যাবে। এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। এক জায়গায় কেটে বোরিং করে পাইপ নিয়ে যান।”

এরপর সভাপতির বক্তব্যে ওয়াসার চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কর্ণফুলী ও হালদা এই দুই নদীর পানি পরিশোধন করেই নগরবাসীকে দেওয়া হয়। এ দুই নদী যদি এভাবে শিল্প ও গার্হস্থ্য বর্জ্যে দূষিত হতে থাকে তাহলে পানি আর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিতে পারব না। তাই স্যুয়ারেজ প্রকল্প।

“প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক চ্যালেঞ্জ। রোড কাটা যাবে না। ড্রিল করে তারপর পাইপ ড্রাইভ করে নিয়ে যেতে হবে, যেন রাস্তা না ভাঙে। এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।”

নগরবাসীর উদ্দেশে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সবাইকে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে সহায়তা করতে হবে। বাধা দিলে ওয়াসা কাজ করতে পারবে না। মাস্টারপ্ল্যান দেখে এগোতে হবে। সব নিশ্চিত করেই কাজ এগোতে হবে।”

পরে মেয়রের প্রস্তাব বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, “আমরা ওভাবেই করব, একটি বা দুটি ওয়ার্ড নিয়ে একবার। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়। ২০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনে পুরোটা কাটব না। হয়ত সবমিলিয়ে ১০ কিলোমিটার কাটা হবে। বাকিটা কাটা হবে না। এই পাইপ কখনো লিক হবে না। একদম মডার্ন টেকনোলজি।”

নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে ওয়াসার এমডি বলেন, “পয়ঃসংযোগ দিতে ভবনের সীমানার মধ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। ভবনের পয়ঃবর্জ্য নির্গমন পাইপের সাথে ইন্সপেকশন চেম্বারের সংযোগ দেওয়া হবে।

“শুরুতে বিদ্যমান সেপটিক ট্যাংক বাইপাস লাইনের মাধ্যমে ইন্সপেকশন চেম্বারে সংযোগ রাখা হবে। পরে সেপটিক ট্যাংক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার পর পয়ঃসংযোগ চালু হবে। এসব কাজ ওয়াসা নিজ খরচে করবে। কিন্তু কানেকশন দিতে গেলে যদি কেউ বলেন, ভাই আমাদের লাগবে না তা তো হবে না। স্যুয়ারেজ লাইন সব ভবনের থাকতে হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, “শুরুতে স্যুয়ারেজের জন্য বিল থাকছে না। কাজ শেষ হলে পানির বিল যেভাবে হয়, সেভাবে স্যুয়ারেজেরও বিল ধার্য হবে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এ সেবা ফ্রি দেওয়া হবে।

“এটা অনেক বড় বাজেটের প্রকল্প। কিন্তু চট্টগ্রামের বিষয় বলে প্রধানমন্ত্রী পুরোটা অনুদানের টাকা এ প্রকল্পের জন্য এনে দিয়েছেন, ঋণের নয়।”

শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ১০ কোটি লিটার ক্ষমতার পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। ২০০ কিলোমিটার পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। ২৮ হাজার বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের সুফলভোগী হবে ২০ লাখ নগরবাসী।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুরো শহরকে ছয়টি জোনে ভাগ করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে জোন-১-এর অধীনে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের প্রথম পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন পায়।

প্রকল্পের প্রথম পর্বে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকার এই জোনের কাজ ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা। বাকি ৫টি জোনের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ চলছে। সব বাস্তবায়ন শেষে ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো নগরীকে ‍স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আনা লক্ষ্য ওয়াসার। 

মত বিনিময় সভায় অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক।