গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন কথক দাশ।
Published : 17 Feb 2025, 06:59 PM
চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে ইসকনকে নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তেজনা থেকে যৌথবাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় চিকিৎসক কথক দাশকে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
সোমবার চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যৌথবাহিনীর কাজে বাধাদানের অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় পুলিশের করা ওই মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ডা. কথক দাশের ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়েছিল পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
কথক দাশ চট্টগ্রাম লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট ও হসপিটালের কনসালটেন্ট।
ইসকন নিয়ে ফেইসবুক পোস্ট দেওয়াকে ঘিরে গত বছরের ৫ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে তুলকালাম ঘটে যায়।
সেখানকার মিয়া শপিং সেন্টার মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ওসমান মোল্লা ইসকনকে নিয়ে ‘ব্যাঙ্গাত্মক’ পোস্ট করেন বলে অভিযোগ উঠলে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ৫ নভেম্বর রাতে বিক্ষুব্ধরা দল বেঁধে ওই মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে দোকানটি ঘিরে ফেলে।
সেদিন রাতে পুলিশ গিয়ে পোস্টদাতা ওসমানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সেসময় তারা পুলিশকে ধাওয়া দেয় ও যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটেকল ছোড়ে। সেসময় এসিড নিক্ষেপেরও অভিযোগ ওঠে।
পরে সেই রাতে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে আটকের পর দোকানপাট সিলগালা করে দেয়া হয়।
ঘটনার পরদিন ৬ নভেম্বর রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০/৬০০ জনকে আসাম করে মামলা করে পুলিশ। সেই মামলায় যৌথবাহিনীর কাজে বাধা দান ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপর গেরুয়া আরেকটি পতাকা টাঙানোর অভিযোগে হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি কথক দাশকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন তাকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল।
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আরেকটি পাতাকা টাঙানোর অভিযোগে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা হয়েছিল গত বছরের ৩০ অক্টোবর।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর নগরীর নিউ মার্কেট চত্বরে একটি লাঠিতে জাতীয় পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘির মাঠে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের সমাবেশের দিন নিউ মার্কেটের ওই পতাকার উপর গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা ধরনের সমালোচনা হয়। পরে সেটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
লালদীঘির মাঠে সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ওই সমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম হয়। ৮ দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ এবং ঢাকায় লং মার্চের ঘোষণা দেয়া হয় সেই সমাবেশ থেকে।
এই মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখনো কারাগারে আছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী।
আরও পড়ুন
চিন্ময়ের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে চিকিৎসক
হাজারী গলির ঘটনায় ৪৯ জন কারাগারে
চিন্ময় কেন জামিন পাবেন না, প্রশ্ন হাই কোর্টের
পতাকাকাণ্ড: সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা